ভোটের ফলই বেরোবে না হয়তো: ডোনাল্ড ট্রাম্প
ভোটের মুখে ফের বেফাঁস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডাক-যোগে ভোট নিয়ে আগেই আপত্তি জানিয়েছিলেন। এমনকি এ ভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলে ভোট-জালিয়াতি হতে পারে বলে ডেমোক্র্যাটদের দিকে আঙুলও তুলেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু তাঁর কোনও আপত্তিই ধোপে টেকেনি। এ বার তাই কার্যত মরিয়া হয়েই তাঁকে বলতে শোনা গেল, ভোট হবে, কিন্তু ভোটের ফল হয়তো কোনও দিনই বেরোবে না! কাউন্সিল অব ন্যাশনাল পলিসির একটি সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে কাল ট্রাম্প বলেন, ‘‘ভোটের দিনই ফল ঘোষণার যে রেওয়াজ রয়েছে, এ বার তা সম্ভব নয়। আমার তো মনে হয়, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাসও কেটে যেতে পারে। হয়তো কোনও দিন জানতেই পারবেন না, কে জিতলেন!’’
করোনা-ত্রাসের আবহে একটা সময়ে ভোট পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী জো বাইডেনের থেকে পিছিয়ে থাকার কারণেই চাপে পড়ে এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তাঁর সেই প্রস্তাবে আমল দেয়নি বিরোধী শিবির। ভোট হচ্ছে নির্ধারিত ৩ নভেম্বরেই। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, অতিমারি-আবহে এ বার অন্তত ৫ কোটি মার্কিন নাগরিক ডাক-যোগে ব্যালট পেপারে ভোট দেবেন। ট্রাম্পের দাবি, এই ভোট গণনাতেই দীর্ঘ সময় কেটে যাবে। পাশাপাশি, এই ভোটে কারচুপি এবং ফল ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে আইনি মামলাও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়াকে অনেক বেশি দীর্ঘায়িত করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাই ট্রাম্পের দাবি অমূলক নয় বলেও দাবি বিশেষজ্ঞদের একাংশের। বাকিরা আবার এর পিছনে ট্রাম্পের পাল্টা চাপ দেওয়ার মানসিকতাকেই দুষছেন।
এপ্রিলের নিরিখে বাইডেনের জনপ্রিয়তা খানিক কমলেও, এখনও তিনি ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় আট পয়েন্টে এগিয়ে। তাই ক্রমশ স্নায়ুর চাপ বাড়ছে প্রসিডেন্টের। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই কাল ট্রাম্প বলেন, ‘‘পুরো ব্যাপারটাই কেমন অলীক মনে হচ্ছে। ৫ কোটি ব্যালট-ভোটের জন্য আমরা আদৌ প্রস্তুত নই। দেশের পক্ষে এ এক অত্যন্ত বিব্রতকর পরিস্থিতি। গণতন্ত্রের পক্ষেও সমস্যাটা গুরুতর।’’
বিরোধী শিবির কিন্তু অন্য কথা বলছে। ট্রাম্প যে হেতু সম্প্রতিই দেশের ডাক বিভাগের জন্য বরাদ্দ ব্যয়সঙ্কোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাই ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, ট্রাম্প এ ভাবে ভোটটাই বানচাল করতে চাইছেন। উল্টে এখন আবার ডাক বিভাগের মন্থর গতির জন্যই ভোটের ফলপ্রকাশে দেরি হবে বলে পাল্টা চাপ দিচ্ছেন। ব্যয় সঙ্কোচন-সহ ডাক বিভাগে ট্রাম্প যে সব পরিবর্তন আনতে চেয়েছেন, তা আটকাতে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছেন ডেমোক্র্যাটরা। এমনকি সূত্রের খবর, সরকারের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন ছয় রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা।
এ বারের ভোটেও বাইরের দেশের হস্তক্ষেপের আশঙ্কা থাকছেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত বুধবারই এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন নির্বাচনী সুরক্ষা দফতরের শীর্ষ আধিকারিক বিল ইভানিয়া। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘আমেরিকার ভোটে হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে রাশিয়া, চিন কিংবা ইরানের সম্ভাব্য ভূমিকা নিয়ে আমরা অত্যন্ত চিন্তিত।’’ বিশেষত নির্বাচনের দিনে সাইবার হামলা বা ভোট-হ্যাকিংয়ের আশঙ্কাও করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিলের কথায়, ‘‘অনেকেই হয়তো ভোটই দিতে পারবেন না।’’
এ দিকে ভোটের হাওয়া ক্রমশ গরম হচ্ছে। স্লোগান তৈরি— ‘আমেরিকা কা নেতা ক্যায়সা হো/ জো বাইডেন য্যায়সা হো’। সৌজন্যে সিলিকন ভ্যালির ভারতীয় বংশোদ্ভূত দম্পতি। প্রেসিডন্ট পদপ্রার্থী বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিসের জন্য একটি মিউজ়িক্যাল প্রচার ভিডিয়ো আপলোড করেছেন অজয় এবং বিনীতা ভুতোড়িয়া।