প্রিমিয়াম বাড়ছে স্বাস্থ্যবিমার, উদ্বেগে মধ্যবিত্ত
![](https://drishtibhongi.in/wp-content/uploads/2020/08/health-insurence-premium-1024x576.jpg)
দেশে রোজ বাড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যাও ঊর্ধ্বমুখী। যাঁরা স্বাস্থ্যবিমা করিয়ে রেখেছিলেন, তাঁদের করোনার চিকিৎসার খরচ জোগাতে হচ্ছে বিমা সংস্থাগুলিকে। এই খাতে এখনও পর্যন্ত দু’হাজার কোটিরও বেশি টাকা মেটানোর আবেদন জমা পড়েছে বলে খবর। সংস্থার কর্তারা বলছেন, কত টাকার ক্লেম বা চিকিৎসা জনিত খরচ মেটানো হল, তার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিমার প্রিমিয়ামের পরিমাণ নির্ধারিত হয়। এখন যেভাবে সংস্থাগুলিকে করোনার চিকিৎসা খরচ জোগাতে হচ্ছে, তার প্রভাব এবার সরাসরি পড়বে প্রিমিয়ামের উপরেই। ফলে স্বাস্থ্যবিমার খরচ একধাক্কায় বেশ খানিকটা বাড়তে চলেছে বলেই জানাচ্ছেন বিমা-কর্তারা। উদ্বেগ বেড়েছে মধ্যবিত্তের।
ভারতে করোনা সংক্রমণের গোড়ার দিকে স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তখন এই ক্ষেত্রের প্রতিটি সংস্থাকেই করোনা চিকিৎসার খরচ মেটানোর কথা জানিয়ে দেয় বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইনসিওরেন্স রেগুলেটরি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (আইআরডিএআই)। জেনারেল ইনসিওরেন্স কাউন্সিল সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩৯ হাজার করোনা রোগী ২ হাজার ৪০ কোটি টাকার ক্লেম বা চিকিৎসা খরচ মেটানোর আবেদন জমা করেছেন। শুধু করোনার চিকিৎসার জন্য প্রায় সব সংস্থাই বাজারে এনেছে করোনা কবচ নামে স্বাস্থ্যবিমা। তার ক্লেমও জমা পড়েছে। কাউন্সিল সূত্রে খবর, শহর এলাকায় থাকা হাসপাতালগুলিতে করোনা চিকিৎসার জন্য ক্লেম আসছে রোগী পিছু গড়ে দেড় লাখ টাকার মতো। গ্রামীণ এলাকায় তা প্রায় ৮০ হাজার টাকা। আইসিইউ বা আইটিইউতে ভর্তি থাকা সঙ্কটজনক রোগীদের জন্য ক্লেমের হার গড়ে পাঁচ থেকে সাত লক্ষ টাকা। এই অঙ্কটা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিমা সংস্থাগুলির অভিযোগ, এক শ্রেণীর বেসরকারি হাসপাতাল মেডিক্লেম থাকলেই অকারণে করোনা চিকিৎসা খরচ একলাফে অনেকটা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে চাপ বাড়ছে সংস্থার উপর।
বিমা সংস্থার কর্তারা বলছেন, এখন চালু থাকা স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পগুলির প্রিমিয়াম নির্ধারিত হয়েছিল বিগত বছরে ক্লেম মেটানোর পরিমাণের উপর। এবার করোনার জন্য কত টাকা বাড়তি খরচ হল, তার ভিত্তিতে নতুন করে প্রিমিয়ামের হার ঘোষণা হবে। তা যে মধ্যবিত্তের পক্ষে মোটেও কম হবে না, তা এখনই আন্দাজ করতে পারছেন সংস্থার কর্তারা।
আতঙ্কেই হোক, বা সাবধানতা… এই করোনা পর্বে জোয়ার এসেছে স্বাস্থ্যবিমায়। এই প্রথম প্রিমিয়াম দেওয়ার ক্ষেত্রে জীবনবিমা বাদে অন্যান্য সব বিমাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে এই ক্ষেত্র। ‘নন লাইফ সেগমেন্ট’-এ স্বাস্থ্যবিমা চলে এসেছে এক নম্বরে। ইনসিওরেন্স ইনফরমেশন ব্যুরো অব ইন্ডিয়ার (আইআইবি) সর্বশেষ রিপোর্ট বলছে, গাড়িবিমাকেও টপকে গিয়েছে স্বাস্থ্যের প্রিমিয়াম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নয়ের দশকে দেশে স্বাস্থ্যবিমা শুরু হয়। তারপর থেকে কোনওদিন এই ক্ষেত্রে এমন বিপুল উত্থান হয়নি। এক রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার আধিকারিক জানিয়েছেন, মানুষ যে হারে স্বাস্থ্যবিমা করছেন, আমাদের নাওয়াখাওয়া ভুলে যাওয়ার জোগাড় হয়েছে। করোনার জন্য এখন স্বাস্থ্যবিমার গুরুত্ব নতুন করে বোঝাতে হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাড়ে সাত কোটি মানুষকে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্যবিমার আওতায় এনেছেন।
আইআইবি সূত্রের খবর, এ বছর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত পাওয়া সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, গত চার মাসে ১৮,৪১৫.৫২ কোটি টাকার প্রিমিয়াম দিয়েছেন দেশবাসী। দু’নম্বরে রয়েছে গাড়িবিমা। মোট প্রদত্ত প্রিমিয়াম ১৭,০৪৯.২৭ কোটি টাকা। তিন এবং চার নম্বর জায়গায় রয়েছে যথাক্রমে অগ্নিকাণ্ডবিমা (৯,১১৫.৫১ কোটি) এবং ফসলবিমা (৪,৮৮৩.১৪ কোটি টাকা)। জীবনবিমা বাদে বাদবাকি সমস্ত ক্ষেত্র মিলিয়ে মোট প্রিমিয়ামের পরিমাণ ৫৬,৩৪২.৪০ কোটি টাকা।