১০ লক্ষ কৃষককে বাংলা শস্যবিমায় আনার উদ্যোগ, বাড়ল সময়সীমা
টার্গেট আমনের মরশুমে আরও ১০ লক্ষ কৃষকের অন্তর্ভুক্তি। আর তাহলেই ইচ্ছেপূরণ হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজ্যের মোট ৭১ লক্ষ কৃষকের মধ্যে ৬৮ লক্ষই ঢুকে পড়বেন ‘বাংলা শস্যবিমা’র ছাতার তলায়। এই লক্ষ্যেই চলতি আমন মরশুমে নাম নথিভুক্তির সময়সীমা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। এই লক্ষ্যপূরণ হলে পরের মরশুমের জন্য বাকি থাকবেন মাত্র ৩ লক্ষ। তখন সহজেই ১০০ শতাংশ কৃষককে শস্যবিমার আওতায় নিয়ে আসতে পারবে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার এমনই ইঙ্গিত দিলেন এগ্রিকালচার ইনসিওরেন্স কোম্পানির আধিকারিক তথা প্রকল্পের নোডাল অফিসার সৌরভ গুপ্ত। শুধু তাই নয়, ক্ষতিপূরণের হিসেব-নিকেশ প্রক্রিয়ায় এবার ইসরোর উপগ্রহ চিত্রকে কাজে লাগাবে রাজ্য। এটাও নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত সরকারের। কৃষকদের হাতে দ্রুত বিমার টাকা তুলে দিতে এই উদ্যোগ।
এদিন ‘কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ড্রাস্টি (সিআইআই ) আয়োজিত এক আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন সৌরভবাবু। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘বাংলা শস্যবিমা প্রকল্পে খরিফ মরশুমে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫৮ লক্ষ কৃষক অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। রাজ্যের অনুরোধে বিমা প্রকল্পে আমন ধানের জন্য নাম নথিভুক্ত করার সময়সীমা বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এতে নথিভুক্ত কৃষকের সংখ্যা আরও ১০ লক্ষ বাড়বে বলে আশা করছি।’
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগেই চালু হয় ‘বাংলা শস্যবিমা’। ধান, পাট, ভুট্টা প্রভৃতি ফসলের উপর বিমা করার ক্ষেত্রে কৃষকদের কোনও প্রিমিয়াম দিতে হয় না। প্রিমিয়ামের খরচ বহন করে রাজ্য। ইনসিওরেন্স আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে নাম থাকা ও গতবারে শস্যবিমা যাঁরা করিয়েছিলেন, তাঁরা এবার নতুন করে আবেদন না করলেও বিমার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছেন। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে নথিভুক্তের সংখ্যা এখন প্রায় ৪৭ লক্ষ।
সৌরভবাবু জানিয়েছেন, ‘শস্যবিমা’র পোর্টাল রয়েছে। ওই পোর্টালে গিয়ে কোনও কৃষক নিজেই দেখে নিতে পারবেন, তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত আছে কি না। নাম না থাকলে কৃষিদপ্তরের স্থানীয় অফিসে গিয়ে আবেদন করা যাবে। আবার মোবাইলের মাধ্যমেও আবেদন নথিভুক্ত হবে। পোর্টাল থেকে বিমা হওয়ার প্রভিশনাল সার্টিফিকেট ডাউনলোড করে নেওয়া যাবে। বিমার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়াকে দ্রুত ত্বরান্বিত করতেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে রাজ্য। এবারই প্রথম ক্ষতির পরিমাণ জানতে ইসরোর উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি ব্যবহার করা হবে। সেই সঙ্গে আবহাওয়ার তথ্য ও মাঠের সামনে থেকে তোলা ছবিও খতিয়ে দেখা হবে। এতে তাড়াতাড়ি ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাবে বলে বিমা সংস্থার দাবি। মরশুম শেষ হলে, অর্থাৎ ফসল কাটার সময় শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে এবার থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। গতবার খরিফ মরশুমের শেষের দিকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়। ফসলের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া এখনও চলছে।
এদিন সিআইআইয়ের ওই সভায় ফসলের সংরক্ষণ ও পরিচালন ব্যবস্থার উন্নয়ন, কৃষি ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা হয়। উঠে আসে বিভিন্ন খাতে সরকারের আর্থিক অনুদান ও সাহায্যের বিষয়টিও। রাজ্যের হর্টিকালচার অধিকর্তা ডঃ পীযূষকান্তি প্রামাণিক, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ সুব্রত কর্মকার এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান। তাঁরা বলেন, ‘সংরক্ষণ ও পরিচালন ব্যবস্থার খামতি রয়েছে গোটা দেশেই। ফলে, উৎপাদিত ফসলের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। এটা কমাতে পারলে কৃষকদের আয় বাড়বে। চাষে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়লে উৎপাদনের খরচ অর্ধেকের বেশি কমানো সম্ভব।’ সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা এপিডারের ডেপুটি জেনারেল আর কে মণ্ডল। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিদেশে কৃষি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন তিনি।