সনিয়া ও মমতার আহ্বানে জেইই-নিট নিয়ে বিরোধীদের বৈঠক আজ
সনিয়া গাঁধী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যৌথ আহ্বানে বিরোধী-শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে ‘ভার্চুয়াল’ বৈঠক হতে চলেছে আজ, বুধবার। বৈঠকের মূল আলোচ্য করোনা পরিস্থিতির মধ্যে নিট এবং জেইই পরীক্ষা নেওয়ার বিরোধিতা। বিরোধীদের নিয়ে এমন বৈঠকের যৌথ আহ্বায়ক হওয়ার জন্য মমতাকে প্রস্তাব দিয়েছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। সেই আহ্বান গ্রহণ করে মমতার প্রস্তাব, বর্তমান সময়ের জরুরি প্রয়োজন বিবেচনা করে ওই বৈঠকে নিট এবং জেইই-প্রশ্নে আলোচনা হোক। যা মেনে নিয়েছেন সনিয়া। তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, সনিয়া-মমতার যৌথ উদ্যোগে এমন বৈঠক সাম্প্রতিক কালে প্রথম।
কংগ্রেসের শীর্ষ স্তরে ডামাডোল সামাল দিয়ে সোমবার দলের ওয়ার্কিং কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আপাতত সভানেত্রী পদে থাকছেন সনিয়াই। কংগ্রেসে নেতৃত্ব বদলের দাবিতে যাঁরা সরব হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে এবং কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বা বোঝাপড়ায় থাকা দলগুলির তরফেও কিছু নেতা মত দিয়েছেন, এই টানাপড়েনের কারণে বিরোধী ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেওয়া উচিত নয়। তাতে লাভ বিজেপির। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের বিরুদ্ধে বিরোধী শক্তিকে সমন্বয় করার প্রধান দায়িত্ব নিতে হবে সনিয়াকেই।
সেই মতোই মঙ্গলবার আসরে নেমেছেন সনিয়া। মমতাকে সঙ্গে নিয়ে যৌথ ভাবে বিরোধী রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকতে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে সনিয়ার বার্তা আসে মমতার কাছে। সনিয়া চাইছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব এই বৈঠক হোক। এমন বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে মমতা প্রস্তাব দেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ছাত্র-ছাত্রীদের উপরে নিট এবং জেইই চাপিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদকে আলোচ্য করা হোক। সেই প্রস্তাবই মেনে নিয়েছেন সনিয়া। পাশাপাশি, পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে অভিমত দিয়েছে, তা পুনর্বিবেচনার জন্য সর্বোচ্চ আদালতে কেন্দ্রের তরফে আবেদনের আর্জি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও এ দিন ফের চিঠি দিয়েছেন মমতা।
সূত্রের খবর, সনিয়া-মমতার যৌথ আহ্বানে আজ, বুধবার দুপুর আড়াইটেয় অনলাইন বৈঠক হবে। কংগ্রেস-শাসিত ছত্তীশগঢ়, পঞ্জাব, পুদুচেরির মতো রাজ্যের পাশাপাশি ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীদেরও বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা। প্রাথমিক ভাবে সনিয়ার প্রস্তাব ছিল, দেশের অর্থনীতির সঙ্কট এবং রাজ্যগুলির আর্থিক দাবি-দাওয়ার বিষয়ে ওই বৈঠক হোক। কেন্দ্রের কাছে বাংলার পাওনার বিষয়ে ইতিমধ্যে একাধিক বার সরব হয়েছেন মমতাও। কিন্তু এ দিন দুপুরে সনিয়ার ওই প্রস্তাব পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মত দেন, আর্থিক দাবি-দাওয়া নিয়ে বৈঠক করতে হলে কিছু সময় লাগে। হিসেব-নিকেশের খতিয়ান তৈরি করতে হয়। সনিয়া চাইছিলেন, কাল বিলম্ব না করে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে দ্রুত বৈঠকের আয়োজন হোক। সব দিক বিবেচনা করেই মমতা প্রস্তাব দেন, তার চেয়ে তাঁদের বৈঠক হোক নিট-জেইই নিয়ে। এটাই এখন জ্বলন্ত সমস্যা। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে ওই পরীক্ষা ধার্য হওয়ায় লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী বিপন্ন, তাঁদের পরিবারও অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগে ভুগছে।
মমতার এই প্রস্তাব পেয়ে সনিয়া জানান, তিনি একটু আলোচনা করে নিয়ে চূড়ান্ত মত জানাবেন। সন্ধ্যার পরে আবার তাঁর তরফে মমতাকে জানিয়ে দেওয়া হয়, নিট-জেইই’র বিষয় নিয়েই আজ বৈঠকে আলোচনা হবে। সেই সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কী ভাবে বারবার আঘাত আসছে, সেই বিষয়েও কথা হতে পারে বৈঠকে।
বস্তুত, নিট এবং জেইই-র প্রশ্নে বিরোধী শিবির এবং কেন্দ্রের শাসক এনডিএ-র মধ্যে থেকেও প্রতিবাদ বাড়ছে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক পরীক্ষা বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিওয়াল নিশাঙ্কের কাছে। বিহারে চিরাগ পাসোয়ান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন, তিনি যেন ছাত্র-ছাত্রীদের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ করেন। একই অনুরোধ জানিয়ে এ দিন প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন মমতা। তিনি লিখেছেন, রাজ্যের তরফে সোমবার চিঠি দেওয়ার পরেও ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির নির্দেশিকায় দেখা যাচ্ছে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা শুরুর প্রস্তুতি চলছে। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের অভিমত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানিয়ে কেন্দ্র যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের স্বস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করে, তার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তিনি। চিঠিতে মমতার বক্তব্য, ‘‘আমি ধারাবাহিক ভাবে বলে আসছি, অতিমারির এই পরিস্থিতি নজিরবিহীন এবং এই সময়ে কারও জীবন বিপন্ন করে তোলার মতো সিদ্ধান্ত আমাদের নেওয়া উচিত নয়। পরিস্থিতির স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে দ্রুত হস্তক্ষেপ দরকার, যাতে পড়ুয়াদের শারীরিক ঝুঁকি না হয় এবং তাদের কেরিয়ারও বিপন্ন না হয়।’’