দলিত লেখককে সম্মান মমতার, মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে লাইব্রেরিতে দিলেন কাজ
তিনি দলিত লেখক, শুধু তাই নয়, চরম প্রতিকূলতার মধ্যে থেকে উঠে এসে আজ তাঁর লেখা সমাদৃত হচ্ছে বিশ্ব দরবার। বাংলার সেই প্রান্তিক কলমচি মনোরঞ্জন ব্যাপারীর আবেদনে তড়িঘড়ি সাড়া দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনশিক্ষা দফতরের অধীনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার হেলেন কিলার বধির বিদ্যালয়ে রান্নার কাজ করছেন প্রবীণ মনোরঞ্জন বাবু। সম্প্রতি নিজের বয়সের কারণে অত্যন্ত পরিশ্রমের এই কাজ থেকে সরিয়ে যদি তাঁকে অন্যত্র কাজের ব্যবস্থা করা যায়, সেই কারণে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আবেদন করেছিলেন তিনি।
সেই খবর মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছতেই তিনি জনশিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, প্রবীণ এই লেখককে দ্রুততার সঙ্গে তাঁর বর্তমান কাজ থেকে সরিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিদ্যানগর জেলা পাবলিক লাইব্রেরিতে বদলি করে দিতে। মঙ্গলবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে মনোরঞ্জন বাবুকে ফোন করে এই খবর জানান। মুখ্যমন্ত্রীর এই সাহায্যে আপ্লুত প্রবীণ এই লেখক। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।
গতবছরই দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্যের সব থেকে ‘ওজনদার’ পুরস্কার, ভারতীয় মুদ্রায় ১৮ লক্ষ টাকার ডিএসসি প্রাইজের তালিকার লংলিস্টে জায়গা পেয়েছিল ব্যতিক্রমী সাহিত্যিক মনোরঞ্জন ব্যাপারীর ‘বাতাসে বারুদের গন্ধ’র ইংরেজি অনুবাদ ‘দেয়ার্স গানপাউডার ইন দি এয়ার’। ‘বাতাসে বারুদের গন্ধ’র অনুবাদ করেছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক অরুণাভ সিংহ।
যদিও প্রবীণ এই লেখক বরাবর বলে এসেছেন, ‘পুরস্কারের আশায় আমি লিখি না। বাতাসে বারুদের গন্ধ বইয়ে ছ’য়ের দশকে দরিদ্র-নিপীড়িত মানুষদের জন্য শিক্ষিত মধ্যবিত্ত তরুণদের মরণপণ সংগ্রামকে তুলে ধরেছি।’ উল্লেখ্য, ‘ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন’এর জন্য মনোরঞ্জন ব্যাপারী ২০১৪ সালে পেয়েছিলেন বাংলা আকাদেমি পুরস্কার।
যাদবপুর স্টেশন চত্বরে একসময় রিক্সা চালাতেন তিনি। অপরাধ জগতেও হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। শেষে নকশাল আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে যোগদান, জীবন তাঁকে প্রতিনিয়ত যেন পরীক্ষা নিয়ে গিয়েছে। একসময় ঠাঁই হয়েছিল জেলখানায়। আর সেখান থেকেই বদলে গেল তাঁর জীবনের গতিপথ। পড়াশোনা করতে শুরু করলেন। জেল থেকে বেরিয়েও তা থেেক গেল বাকি জীবন। এল সম্মান, নাম, যশ। সমানতালে কাজও চলতে লাগল। এবার বয়সের কারণেই সেই রান্নার কাজ থেকে ছুটি চেয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সেই আবেদনেও সাড়া দিলেন তড়িঘড়ি।