হাতির উপদ্রব কমাতে উত্তরবঙ্গে নয়া পরিকল্পনা বনদপ্তরের
এবার থেকে হাতিদের আর তাড়ানো হবে না, তাদের সুরক্ষিতভাবে গাইড করে বনে ফেরানো হবে। উত্তরবঙ্গে হাতিদের বনে ফেরানোর জন্য এই প্রথম এমন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এতে সফল হলে উত্তরবঙ্গজুড়ে হাতি উপদ্রুত এলাকায় হাতি-মানুষ সংঘাত দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে বন বিভাগ। কার্সিয়াং বন বিভাগের বাগডোগরা রেঞ্জ এবং টুকরিয়া রেঞ্জ কতৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে এই কাজ করছে নেচার ওয়াইল্ডলাইফ অ্যাসোসিয়েন (এনডব্লিউএ) এবং সেভ এলিফ্যান্ট ফাউন্ডেশন নামে দুটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠন।
প্রায় প্রতিদিন তরাই-ডুয়ার্সে হাতি-মানুষ সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। গত বছর শুধু কার্সিয়াং বন বিভাগের এলাকায় হাতির হানায় ৯ জন মারা গিয়েছেন। এর মধ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ২ জন, লোকালয়ে মারা গিয়েছেন ৭ জন। লোকালয়ে হাতির হানায় মৃত্যুতে বন বিভাগকে মোট ৫০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। বাগডোগরার রেঞ্জ অফিসার সমীরণ রাজ জানান, হাতিদের পুরোনো অভ্যাস পরিবর্তন করা কঠিন। কিন্তু উত্তরবঙ্গে এই প্রথম যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তাতে ফসল-বাড়ির ক্ষতি ও প্রাণহানি রোধ করা যাবে বলে তাঁরা আশাবাদী। সাফল্য পেলে উত্তরবঙ্গের যেসব জায়গায় হাতির উপদ্রব বেশি, সেখানে এই ব্যবস্থা কাজে লাগানো যাবে।
তিনি বলেন, আমরা পর্যবেক্ষণ করে হাতির মুভমেন্টের করিডরগুলি চিহ্নিত করেছি। বাগডোগরা এবং টুকরিয়া রেঞ্জের এলাকায় ১০টি করিডর রয়েছে। একটি সংরক্ষিত বন থেকে অথবা লোকালয় থেকে হাতিদের সেই করিডর দিয়ে অত্যন্ত সুরক্ষিতভাবে বনে ফেরত পাঠানো হবে, তবে তাড়িয়ে নয়, গাইড করে। হাতির করিডরে মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকেন। অনেকেই সামনে গিয়ে ছবি তোলার জন্য উৎসাহী হয়ে ওঠেন। এজন্য হাতিরা তাদের পথ পরিবর্তন করে। তাঁর মতে, এতে আরও বেশি ক্ষতি হয়, নাগালের মধ্যে মানুষ এলে হাতি তাঁদের আক্রমণ করে।
তিনি জানান, স্থানীয় প্রশাসন, চা বাগান কর্তৃপক্ষ, সিভিক ভলান্টিয়ার, এনজিও, স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে ১০ সদস্যের ১০টি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমকে প্রশিক্ষণ দিয়ে করিডর এলাকায় প্রস্তুত রাখা হবে। প্রতিটি টিমে ১ জন করে টিম লিডার রাখা হবে। হাতির গতিবিধি জানানোর জন্য প্রতি দলে একটি ওয়াকিটকি থাকবে, রেঞ্জ অফিসারদের কাছেও ওয়াকিটকি থাকবে। সদস্যদের হেডলাইট, সার্চলাইট ইত্যাদি দেওয়া হবে। তাঁরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে কাজ করবেন, হাতিদের পথ দেখিয়ে বনে ফেরাবেন।
এনডব্লিউএ-র সম্পাদক অনুজিৎ বসু জানান, গত ১৩ জুলাই টুকরিয়া রেঞ্জে মিটিং করে টিম গঠন করা হয়েছে। সেভ এলিফ্যান্ট ফাউন্ডেশনের প্রোজেক্ট ইনচার্জ ঋকজ্যোতি সিংহরায় জানান, যৌথভাবে ১০টি দল গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাগডোগরা-নকশালবাড়ির মাঝে কিরণচন্দ্র চা বাগানের সামনে হাতির করিডরে পাহারা চলছে। দুই সংগঠনের তরফেই জানানো হয়েছে, টিমগুলিকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।