প্লাজমা থেরাপির খরচ কমিয়ে আনছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর
প্লাজ়মা অ্যাফেরেসিস’ আর নয়। এই পদ্ধতিতে প্রতি ইউনিট প্লাজ়মা সংগ্রহে লেগে যেত ১০-১২ হাজার টাকা। সরকারের তরফে এই অঙ্কের খরচ বহন করা মুশকিল ছিল। এ বারে তার বদলে এল নতুন পদ্ধতি। সেই পদ্ধতিতে ‘রক্তের উপাদান পৃথগিকরণ’ প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে প্লাজ়মা সংগ্রহ করা হবে। এর ফলে খরচ অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে চিকিৎসামহল সূত্রে জানানো হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী এখন থেকে নতুন পদ্ধতিতে রাজ্যের সব ক’টি ব্লাড ব্যাঙ্কে করোনাজয়ীদের প্লাজ়মা সংগ্রহ করা হবে। তার মধ্যে থাকছে উত্তরবঙ্গ, কোচবিহার ও মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। আর আছে দক্ষিণ দিনাজপুরের সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে মোট ২০টি ব্লাড ব্যাঙ্ক আছে। তবে বাস্তবে ১৬টির মতো ব্লাড ব্যাঙ্কে এই পরিকাঠামো চালু আছে। সরকারি সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গের তিনটি ব্লাড ব্যাঙ্কেও এই পরিকাঠামো রয়েছে।
সরকারি সূত্রে বলা হয়েছে, এত দিন প্লাজ়মা অ্যাফেরেসিস পদ্ধতিতে প্লাজ়মা সংগ্রহ করা হচ্ছিল করোনাজয়ীদের কাছ থেকে। তাতে প্রথমে রক্ত নিয়ে তার পরে প্লাজ়মা আলাদা করতে খরচ অনেক বেশি পড়ে যাচ্ছিল। চিকিৎসকমহল সূত্রে বলা হচ্ছে, তার থেকে রক্তের উপাদান আলাদা করার যে পদ্ধতি, তাতে খরচ অনেকটাই কম।
রাজ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক গোপালকৃষ্ণ ঢালিও বলেন, ‘‘প্লাজ়মা থেরাপির চাহিদার কথা মাথায় রেখে সহজে এবং নিখরচায় যাতে তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সে জন্য এই উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। প্লাজ়মা অ্যাফেরেসিস পদ্ধতি খরচ সাপেক্ষ। তার চেয়ে রক্তের উপাদান আলাদা করার পদ্ধতিতে অনেক সহজেই সেই কাজ সম্ভব হবে। যে সমস্ত হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজগুলির ব্লাড ব্যাঙ্কে এই পরিকাঠামো আছে, তারা চালু করতে পারবে।’’ যদিও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ব্যাঙ্কের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে আপাতত অ্যাফেরেসিস পদ্ধতিতেই কাজ চলছে। এখনও পর্যন্ত ৪০ জন সেখানে প্লাজ়মা দিয়েছেন। কিন্তু উত্তরবঙ্গে?
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের আঞ্চলিক ব্লাড ব্যাঙ্কের অধিকর্তা মৃদুময় দাস জানান, ‘প্লাজমা অ্যাফেরেসিস’ পদ্ধতিতে প্লাজমা সংগ্রহ খরচ বেশি। কারণ প্রতি ইউনিট প্লাজমা সংগ্রহ করতে যে ‘ব্লাড ব্যাগ কমপ্যাক্ট ডিভাইস’ দরকার, তার দাম প্রায় ৯ হাজার টাকা। আনুষাঙ্গিক আরও খরচ ধরতে প্রতি ইউনিট প্লাজমা সংগ্রহের পিছনে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। রক্তের উপাদান আলাদা করার পদ্ধতিতে সেই খরচ নেই। সরকারি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার ২৮ দিন পর এবং চার মাসের মধ্যে উৎসাহীরা প্লাজ়মা দিতে পারবেন।
যদিও প্লাজ়মা থেরাপি কতটা ফলপ্রসূ, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, করোনাজয়ীকে ভাইরাসের যে ‘সেরোটাইপ’ আক্রমণ করেছিল, এবং তার ফলে যে অ্যান্টিবডি গঠিত হয়েছে শরীরে, তা অন্য সেরোটাইপের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই এই নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষাও চলছে।
বুধবারই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ওই পরিষেবা চালু করা নিয়ে বৈঠক হয়। অধ্যক্ষ প্রবীরকুমার দেব বলেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে, নিয়মকানুন দ্রুত তৈরি করে পরিষেবা চালুর চেষ্টা চলছে।’’ সেই মতো করোনা জয়ীদের প্লাজ়মা সংগ্রহের প্রক্রিয়াও দ্রুত চালু করা হবে। উত্তরবঙ্গে প্লাজ়মা থেরাপি চালু করতে তৎপর হন করোনাজয়ী চিকিৎসক অনির্বাণ রায়-সহ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ, ডিনরা অনেকেই। করোনা মোকাবিলায় রাজ্য টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকারের এই নির্দেশের ফলে বিভিন্ন জায়গায় প্লাজ়মা থেরাপি চালু করা সহজ হবে।’’