লাদাখের পরিস্থিতি ১৯৬২-র পর সবচেয়ে উদ্বেগজনক-জয়শঙ্করের
আলোচনায় কাজ না হলে চিন সীমান্তে সামরিক পদক্ষেপের পথ খোলা বলে সোমবার মন্তব্য করেছিলেন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত। তার কয়েক দিনের মাথায় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর স্পষ্ট করে দিলেন, চিনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা মেটাতে এখনও পর্যন্ত কূটনৈতিক স্তরেই ফোকাস করছে নয়াদিল্লি। সেই সঙ্গে তিনি এ-ও স্বীকার করে নিয়েছেন, পূর্ব লাদাখে চিনের সঙ্গে সীমান্ত সঙ্ঘাতের উত্তাপ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা ১৯৬২ সালের পর তা আর কখনও হয়নি। গালওয়ানে ভারত এবং চিনের সীমান্ত সঙ্ঘাত শুরু হওয়ার পর সাড়ে ৩ মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু সময় যতটা এগিয়েছে নয়াদিল্লি এবং বেজিংয়ের মধ্যে সমঝোতার বল ততটা গড়ায়নি বলেও জানিয়েছেন জয়শঙ্কর।
গালওয়ান উপত্যকায় ভারতীয় সেনা এবং চিনা বাহিনীর সঙ্ঘাতকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এস জয়শঙ্কর। এক সাক্ষাৎকারে বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘‘১৯৬২ সালের পর এটা নিশ্চিত ভাবেই সবচেয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। বাস্তবে ৪৫ বছর পর সীমান্তে আমাদের দু’পক্ষের মধ্যে প্রাণহানি হয়েছে। সম্প্রতি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় দু’পক্ষ যে ভাবে সেনা মোতায়েন করেছে তা অভূতপূর্ব।’’ তাঁর মতে, ‘‘গত ৩ দশকের ইতিহাসের দিকে তাকালেই এটা স্পষ্ট বোঝা যাবে। কারণ, গত সাড়ে ৩ মাস ধরে সেনা এবং কূটনৈতিক স্তরে দফায় দফায় আলোচনার পরেও পূর্ব লাদাখে দু’দেশের বাহিনী মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে।’’
গত মে মাস থেকে পূর্ব লাদাখে মুখোমুখি ভারত এবং চিনের সেনা। গত ১৫ জুন দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও হয়। তার পর থেকেই নয়াদিল্লি এবং বেজিংয়ের মধ্যে তিক্ততা চরমে পৌঁছেছে। উত্তেজনা কমাতে দু’পক্ষের মধ্যে সেনা এবং কূটনৈতিক স্তরে দীর্ঘ আলোচনাও চলে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির বিশেষ বদল হয়নি। বিদেশমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে জানিয়ে দিয়েছেন, চিনকে স্পষ্ট করেই সীমান্তে শান্তি এবং স্থিতাবস্থা বজায় রাখার বার্তা দেওয়া হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে সুসম্পর্কের ভিত্তি যে এগুলিও, তা-ও বেজিংকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি।
দুই প্রতিবেশীর মধ্যে গালওয়ানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এর আগেও। সে সময় রাস্তা খুলেছে কূটনীতির মাধ্যমেই। সেই ইতিহাস টেনে এনে জয়শঙ্কর জোর দিয়েছেন কূটনৈতিক আলোচনা চালানোয়। তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক দশকে একাধিক বার সীমান্তে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ঘটনা ঘটেছে— দেপসাং, চুমর এবং ডোকলাম। প্রতিটি সঙ্ঘাতই অন্যগুলির থেকে আলাদা। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই কূটনৈতিক স্তরেই সমস্যার সমাধান হয়েছে।’’ তাঁর মতে, এত তরফা ভাবে স্থিতাবস্থা না ভেঙে চিনের উচিত, দু’দেশের সমস্ত চুক্তি এবং সমঝোতাকে সম্মান জানানো।