রবীন্দ্রনাথকে ‘বহিরাগত’ বলায় দুঃখ প্রকাশ বিশ্বভারতীর
বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ‘বহিরাগত’ বলে উল্লেখ করায় বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সে–বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করা হয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে। উপাচার্যের মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলা হয়, রবীন্দ্রনাথ ও তঁার পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর বোলপুরের বা বীরভূমের বাসিন্দা ছিলেন না। তঁারা কলকাতার মানুষ। অতএব বহিরাগত সেই অর্থে। অর্থাৎ, দুঃখপ্রকাশ করলেও বিশ্বভারতীর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রবীন্দ্রনাথ যে ‘বহিরাগত’, সেটাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পৌষমেলা বন্ধের কোনও ইচ্ছা বিশ্বভারতীর নেই, এ কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে। এদিন একটি বৈঠকের পর প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছেন বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার। উপাচার্য অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী এদিন অধ্যাপক ও কর্মীদের সঙ্গে পৌষমেলা নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। সেখানে বিশ্বভারতীর অবস্থানের কথা তুলে ধরেন। নিজেকে অরাজনৈতিক প্রমাণ করতে, গত নির্বাচনের আগে দলীয় প্রচারে আসা প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার বিশ্বভারতীর জায়গায় নামতে না দেওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। পরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ও বিশ্বভারতীর পক্ষে পদ্মশ্রী ডাঃ সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যাখ্যা করেন, কোন্ পরিস্থিতিতে পৌষমেলা না করার অবস্থা তৈরি হয়েছিল। সরকারের সাহায্য পেলে পৌষমেলা করার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।
এদিন বিজেপি–র মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। মেলার মাঠ ঘুরে দেখেন। তিনি বলেন, ‘মাঠে দেহ–ব্যবসা বন্ধ করতে উপাচার্য মাঠ ঘিরতে চেয়েছিলেন। রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী এখানকার তৃণমূল নেতার নেতৃত্বে এই ভাঙচুর চালানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাব।’ তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে, বিজেপি নেত্রীর কথা থেকে পরিষ্কার, তঁারা কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ চাইছেন।
অন্য দিকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘বিজেপি বিশ্বভারতী নিয়ে নোংরামি করছে। বিজেপি–র এক নেত্রী উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সামনে নির্বাচন, তাই বিজেপি উপাচার্যকে দিয়ে ধমকে–চমকে রাখছে। রবীন্দ্রনাথকে আমি শ্রদ্ধা করি। রবীন্দ্রনাথকে মুছে দেওয়ার জন্য শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য পৌষমেলা, বসন্ত উৎসব বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত মানব না।’
উল্লেখ্য, গত বার পৌষমেলাকে ঘিরে উপাচার্য–সহ আধিকারিক অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে লুঠপাট ও শ্লীলতাহানির মামলা পর্যন্ত হয়েছিল। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ ওঠে। সঙ্গে ছিল পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের করা মামলায় পরিবেশ আদালতের চোখরাঙানি। এর পরেই বিশ্বভারতী মেলা করতে না পারার কথা জানিয়ে দেয়। তখন থেকেই ক্ষোভ বাড়ছিল বোলপুরের মানুষের। পাশাপাশি গত বার মেলায় জমা–দেওয়া সিকিউরিটি ডিপোজিটের টাকা ফেরত না পাওয়ার ক্ষোভ ছিল। এর মাঝে পৌষমেলার মাঠ ঘিরে দেওয়া মানে পাকাপাকি ভাবে মেলা বন্ধ করে দেওয়ার ছক। ১৭ আগস্ট বোলপুরের মানুষ মেলার মাঠে পঁাচিল দেওয়া আটকাতে বাধা দেন।