‘আগাম অবসর’ প্রকল্পে ৩ মাসের নোটিসে যেতে পারে সরকারি চাকরি!
লোকসভাকে সরকার জানিয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরগুলিতে প্রায় সাত লাখ অনুমোদিত পদ শূন্য। অর্থাৎ, অবসর নেওয়া সাত লাখ কর্মচারীর শূন্যস্থান পূরণ করা হয়নি। দু’বছরও কাটেনি তার পর। এ বার সরকারি কর্মচারীর বহর আরও কমাতে সমস্ত অফিসে ‘আগাম অবসর’ চালু করার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় সরকার। ৫০ কিংবা ৫৫ বছর অতিক্রম করেছেন এমন কর্মচারীদের মধ্যে যাঁরা ৩০ বছর বা তার বেশি সময় চাকরিতে আছেন, তিন মাসের নোটিসে তাঁদের চাকরি থেকে বসিয়ে দিতে পারে সরকার। সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে থাকা কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ দপ্তর (ডিওপিটি)। গত শুক্রবার জারি করা ওই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, জনস্বার্থে যে কোনও কর্মচারীকে অবসরের নির্ধারিত বয়সের আগেই চাকরি থেকে বসিয়ে দিতে পারে সরকার।
কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে এখন অবসরের বয়স ৬০। ৫০ কিংবা ৫৫ বছরের বেশি বয়সি যে কর্মচারীরা ইতিমধ্যে ৩০ বছর চাকরি করেছেন, ‘আগাম অবসর’ প্রকল্পের জন্য আপাতত দ্রুত তাঁদের নামের তালিকা তৈরি করে ফেলতে বলা হয়েছে সমস্ত দপ্তরকে। বলা হয়েছে, আর্থিক প্রশ্ন তো আছেই, সরকারি কাজে গতি সঞ্চার এবং কর্মী-অফিসারদের দক্ষতার মানদণ্ডকে বিবেচনায় রেখেই আগাম অবসর দেওয়ার এই পরিকল্পনা। পাশাপাশি, সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর সততাও বিচার্য হবে আগাম অবসরের তালিকা তৈরিতে।
এ ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদীর সরকার যে কোমর বেঁধে নেমেছে, তার প্রমাণ রয়েছে সার্কুলারের ছত্রে ছত্রে। যদিও এ জন্য নতুন কোনও আইন বা বিধি প্রণয়ন না-করে তারা হাতিয়ার করেছে ১৯৭২ সালের পেনশন সংক্রান্ত একটি বিধি। বলা হয়েছে, জনস্বার্থে চাকরির মেয়াদ শেষের আগেই কোনও কর্মী-অফিসারকে সরকার বসিয়ে দিতে পারে। নয় পাতার সার্কুলারের প্রতিটি অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি জনস্বার্থে। এই বক্তব্যের সমর্থনে সুপ্রিম কোর্ট-সহ বিভিন্ন আদালতের মামলার রায়ের উল্লেখ করে সরকারি সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি সাজানো হয়েছে। তাতে প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য গুজরাটের একটি মামলার দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সর্বভারতীয় একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জনার্দন মজুমদার রবিবার বলেন, ‘এই সার্কুলারটি কর্মচারীদের জন্য ভয়ঙ্কর বার্তা। এই সার্কুলারকে হাতিয়ার করে সরকার অপছন্দের কর্মী-অফিসারদের চাকরি খাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করে নিল।’ তাঁর আরও বক্তব্য, ১৯৭২ সালের ওই বিধি অতীতে কোনও সরকার প্রয়োগ করেনি।
রেল এবং টেলিকমের মতো বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত দপ্তরগুলিতে অবসরের আগে চাকরি থেকে বসিয়ে দেওয়ার তোড়জোড় চলছিল। আয়কর-সহ বাছাই করা কিছু দপ্তরে উপরতলার অফিসারদের ক্ষেত্রেও আগাম অবসর কার্যকর হয়েছে। এ বার ডিওপিটি সব দপ্তরের সব ক্যাটিগরির কর্মী-অফিসারদের জন্যই মেয়াদ-পূর্ব অবসর চালু বাধ্যতামূলক করে কর্মী সঙ্কোচনের সিদ্ধান্ত বলবৎ করল।