বিবিধ বিভাগে ফিরে যান

খাদ্য আন্দোলন – বামেদের অপরিণামদর্শীতার কারণে প্রাণ দিতে হয়েছিল কৃষকদের

August 31, 2020 | 2 min read

১৯৫৯ সালের ৩১শে আগস্ট খাদ্য আন্দোলনের শহিদ দিবস। বাংলা অনেক দুর্ভিক্ষের মধ্যে দিয়ে গেছে। মহামারি সহ্য করেছে। ইংরেজ বাংলাকে নিঃস্ব করে দিয়েছিল লুট চালিয়ে। তার পর দেশভাগ। রাতারাতি কলকাতার জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেল, যার জন্য পরিস্থিতি প্রস্তুত ছিল না। খাদ্যের অভাবে নুয়ে পড়া বাংলার গরিব মানুষকে তখন বামপন্থীরা স্বপ্ন দেখাতে সফল হয়েছিল। বামপন্থীদের হাত ধরে কলকাতা কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন কৃষকরা। 

৩১শে আগস্ট মনুমেন্টের নীচে জমায়েত ছিল খাদ্যের দাবিতে। তার পর ছিল আইন অমান্য। নিরন্তর ক্ষুধার্ত কয়েক লক্ষ মানুষকে নিয়ে সেই সন্ধ্যায় রাইটার্সের কাছে গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলের সামনে আইন অমান্য করতে গেলে যে সরু রাস্তায় ভিড়ের চাপে জমায়েতের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না, তা বাম নেতারা কেন ভেবে দেখেননি বলা মুশকিল। 

কেন পাঁচ ভাগে, পাঁচটি রাস্তা দিয়ে পাঁচটি মিছিলের আইন অমান্য করতে রাইটার্স যাওয়ার সিদ্ধান্ত আচমকা বদলে একটি মিছিল করা হয়েছিল, তার উত্তর পাওয়া যায় না। ওই সময় কারা পাথর ছুঁড়েছিল, কারা টিল মেরে রাস্তার আলো নিভিয়ে দিয়েছিল, তার উত্তর কোনও দিনই পাওয়া যাবে না। কৃষকরা এসেছিলেন দাবি জানাতে, আত্মহত্যা করতে না।

ভিড়ের চাপে কর্ডন ভেঙে গেল। সন্ধে সাতটার পর লাঠি চলল। পরের দিন স্টেটসম্যান লিখল, “আন্দাজ সন্ধ্যা ৭,২০ নাগাদ প্রায় ১২ জন শোভাযাত্রী পুলিশের বেষ্টনীর ফাঁক দিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে এগিয়ে আসেন। ওই ফাঁকটা পুলিশ রেখেছিল যাতে একে একে গ্রেফতার করতে পারেন আইন অমান্যকারীদের। কিন্তু ওই ১২ জন নয়, দেখা গেল বিরাট জনতা পুলিশ বেষ্টনী ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করছে। তখন শুরু হয় লাঠি চার্জ। হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড লিখেছিল, “প্রথম দল সত্যাগ্রহীদের গ্রেপ্তারের পরে জনতা পুলিশ বেষ্টনীর ফাঁক দিয়া প্রবেশ করিলে পুলিশ লাঠি চার্জ করে।’

কত জনের মৃত্যু হয়েছিল? সব মিলিয়ে বলা হয় ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে ৮০ জনের নাম বহু খোঁজ খবর করেও পাওয়া যায়নি। তবে সংখ্যাটা নেহাত কম ছিল না। কৃষকের মৃত্যুতে বিধান রায়ের সরকার নড়েচড়ে বসল। দেখা গেল নানা জায়গা থেকে চাল সংগ্রহ করতে উদ্যোগী হতে। যা আগে করলে এতগুলো মানুষকে মরতে হত না। 

প্রফুল্ল সেনের টেলিগ্রামের পর টেলিগ্রামের কোনও জবাব দেয়নি যে দিল্লি, সেই কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করল, তারা ৫০ হাজার টন চাল, ৭০ হাজার টন গম পাঠাচ্ছে। রাজ্য নিজেও মধ্যপ্রদেশ থেকে ৩০ হাজার টন ধান আনার ব্যবস্থা করল। জোগান বেড়ে যাওয়ায় চালের দামও কমল। 

কৃষকদের মৃত্যুর পর বিধান রায় বললেন ওরা জোর করে রাইটার্স দখল করতে এসেছিল। ঠিক যেমন জ্যোতি বসু ১৯৯৩ সালের ২১শে জুলাইয়ে মমতার জমায়েতে ১৩ জন যুবকের পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর পর বলেছিলেন। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Khadya Andolon, #Krishak Death

আরো দেখুন