রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

ঘরের ছেলে প্রণবের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ মিরিটি

August 31, 2020 | 2 min read

করোনা (Coronavirus) পরিস্থিতিতে উদ্বেগের মধ্যেই দিন কাটছে সকলের। দুশ্চিন্তা যেন কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। তবে বীরভূমের মিরিটির অবস্থা ছিল আরও দমবন্ধ করা। একই অবস্থা প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দিদির বাড়ি কীর্ণাহারের পরোটা গ্রামের বাসিন্দাদেরও। কারণ, ঘরের ছেলেটা এতদিন শুয়ে ছিল দিল্লির সেনা হাসপাতালে। যমে-মানুষে টানাটানি। হাজারও প্রার্থনা। পূজার্চনা। তবে সব কিছুকে মিথ্যে প্রমাণ করে চলে গেলেন ঘরের ছেলে পল্টু। দুঃসংবাদ পাওয়ার পর থেকেই যেন থমকে গিয়েছে বীরভূমের মিরিটি ও কীর্ণাহার। চলতি বছরের পুজোয় আর তাঁর কণ্ঠে শোনা যাবে চণ্ডীপাঠ, চোখের দেখাও দেখতে পাওয়া যাবে না রাইসিনা হিলস নিবাসীকে। সেকথা ভেবেই চোখের জলে ভাসছেন গ্রামবাসীরা।

১৯৩৫ সালের ১১ই ডিসেম্বর মিরিটি গ্রামে জন্ম। তাঁর মা রাজলক্ষ্মী মুখোপাধ্যায়। বাবা কামোদাকিংকর মুখোপাধ্যায় ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তিনি কীর্ণাহার শিবচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেন। সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজে স্নাতক। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। আইন নিয়েও পড়াশোনা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৭ সালে তিনি শুভ্রা মুখোপাধ্যায়কে বিয়ে করেন। পরিবার সূত্রে খবর, তাঁরা দুই ভাই এবং চার বোন ছিলেন। ছোটবেলাতেই মা মারা যান। বড় দিদি অন্নপূর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেন। ছোট থেকেই প্রণববাবু ছিলেন মেধাবী।

জীবনে সাফল্যের ঝুলিতে সঞ্চয় অনেক কিছু। স্বনামধন্য তিনি। তবে তারপরেও শিকড়ের টানকে কখনও অস্বীকার করেননি প্রণব মুখোধ্যায় (Pranab Mukherjee)। সারা বছর কাজের ব্যস্ততায় অতটা সময় পেতেন না। কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় তিনি রাজনীতিকের পরিবর্তে প্রকৃত অর্থে হয়ে উঠতেন আদ্যন্ত বাঙালি সন্তান। তাই তো প্রতি বছর সে সময় মিরিটির বাড়িতে আসতেন। তিনি চারদিন মিরিটি গ্রামে কাটাতেন। রাতে থাকতেন পরোটা গ্রামে দিদির বাড়িতে। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের কথা তিনি শুনতেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলতেন। মিরিটি গ্রামে পুজো শেষে বাড়ির উঠোনে পাতা হত একটি ইজি চেয়ার। সেখানে বসে গ্রামের প্রতিটি মানুষের অভাব, অভিযোগ শুনতেন। প্রণববাবু বিভিন্ন ধরনের নাড়ু খেতে ভালবাসতেন। তাই পুজোর সময় নারকেল, খই, ছোলা, তিল-সহ সাত থেকে আটরকমের নাড়ু হত। দেড় কুইন্টাল চিনি এবং এক কুইন্টাল গুড় লাগত তাতে। তিনি নিজে অষ্টমীর দিন চণ্ডীপাঠ করতেন। দিদির বাড়িতে দোতলায় তাঁর জন্য একটি ঘর নির্দিষ্ট থাকত। ঘরে ছিল একটি ছোট্ট লাইব্রেরি। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বই সাথে রাখা থাকত। কারণ প্রণববাবু বাঁটুল দা গ্রেট থেকে হাঁদাভোঁদা সব ধরনের কমিকস বই পড়তে ভালবাসতেন।

প্রণববাবুর দীর্ঘদিনের সহকারী রবি চট্টরাজ বলেন, “আমি আমার অবিভাবক হারালাম। তিনি বীরভূমের মানুষ এবং এই জেলার উন্নয়নের কথা সব সময় ভাবতেন। গ্রামের প্রতিটি মানুষের নাম জানতেন, গ্রামে এলে তিনি তাদের খোঁজ নিতেন।” গ্রামের বাসিন্দা তুহিন ঘোষ, জয়ন্ত চট্টপাধ্যায় বলেন, “প্রণব মুখোপাধ্যায় আমাদের গ্রামের মানুষের অবিভাবক ছিলেন। যে মানুষ সাহায্য চাইতে গিয়েছেন তাঁকে তিনি কখনও ফেরাননি। তার অভাব কোনওদিন পূরণ হবে না।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Pranab Mukherjee

আরো দেখুন