খেলা বিভাগে ফিরে যান

ত্রাতার ভূমিকায় মমতা – নীতা – মুকেশ, স্বস্তিতে ইস্টবেঙ্গল

September 2, 2020 | 3 min read

ছবি: ইকোনমিক টাইমস

অসংখ্য লাল-হলুদ ভক্তের মনে আবেগের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্রুতই আসতে চলেছে ভারতীয় ফুটবলের মহা-ঘোষণা। ক্রিকেটের আইপিএলের বাজারেও যা শিরোনাম আদায় করে নিতে চলেছে।  

কী সেই ঘোষণা? 

যাবতীয় অপেক্ষা এবং উদ্বেগের অবসান ঘটিয়ে নতুন লগ্নিকারী এনে এ মরসুমেই আইএসএলের ময়দানে  নেমে পড়তে চলেছে ইস্টবেঙ্গল। শতবর্ষ উদযাপনের বছরে খুব দ্রুতই ভক্তদের জন্য খুশির খবর শোনাতে পারবে তারা, এমনটাই খবর। যার অর্থ, শুধু মোহনবাগান নয়, বাংলার দুই প্রধান ক্লাবকেই আসন্ন আইএসএল প্রতিযোগিতায় খেলতে দেখা যাবে। করোনা অতিমারির জেরে যে প্রতিযোগিতা জৈব সুরক্ষা বলয়ে গোয়ায় হতে পারে নভেম্বরের শেষে। 

এবারের আইএসএলেই ঐতিহ্যের ডার্বি দেখতে পাওয়া প্রায় নিশ্চিত। মশাল বনাম পালতোলা নৌকা। ইলিশ বনাম চিংড়ি। ঘটি-বাঙালের যুদ্ধ। নানা শিরোনামে সারা বিশ্বের খেলাধুলোয় জায়গা করে নেওয়া ঐতিহাসিক দ্বৈরথ থামছে তো না-ই, বরং তা আরও শক্তিশালী, আরও বেশি উত্তেজনা নিয়ে, আরও রংচংয়ে মোড়কে আছড়ে পড়তে চলেছে দেশের ফুটবল সাগরে। 

ছবি: thehindubusinessline.com

অসংখ্য লাল-হলুদ ভক্ত ক্লাবের শতবর্ষে এ ভাবেই আনন্দস্রোতে ভাসতে চলেছেন। নতুন লগ্নিকারী আসা নিশ্চিত, দেশের সর্বোচ্চ লিগে খেলার পথে ইস্টবেঙ্গল। আইএসএলে ঐতিহ্যের ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বিও থাকছে।

মনে করিয়ে দেওয়া যাক, ইস্টবেঙ্গলের যেমন এ বছরেই শতবর্ষ চলছে, তেমনই একশো বছরে পা দিয়েছে ডার্বিও। এমন ঐতিহাসিক লগ্নে দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল লিগে অভিষেক ঘটতে চলেছে দেশের দুই সেরা বঙ্গ ক্লাবের। দেশের সর্বোত্তম লিগে আত্মপ্রকাশ ঘটতে চলেছে ঐতিহ্যের ডার্বির। কোনও সন্দেহই নেই যে, লিগের সেরা আকর্ষণ হতে চলেছে ডার্বি। করোনার কঠিন সময়ে এর চেয়ে ভাল খবর ফুটবলপ্রেমীদের কাছে আর কী হতে পারে! 

অতিমারির আতঙ্কের মধ্যেও  অসংখ্য লাল-হলুদ ভক্তের মনে এই খবর স্বস্তির হাওয়া নিয়ে আসবে। পুরনো লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি এবং শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদ ঘিরে গত ক’মাস ধরে চূড়ান্ত নাটক এবং ডামাডোল চলেছে ইস্টবেঙ্গলে। শতবর্ষে আই লিগও ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে মোহনবাগান।  আগের লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে প্রশ্ন উঠতে থাকে ক্লাবের ভবিষ্যৎ ঘিরে। অন্য দিকে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান তাদের আইএসএল খেলা চূড়ান্ত করে ফেলে এটিকে-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে। তাতে আরওই চাপ বাড়তে থাকে ইস্টবেঙ্গলের উপরে। গত কয়েক মাস ধরে কর্তারা নতুন লগ্নিকারী আনার চেষ্টা করে গেলেও ফল মিলছিল না। 


ওদিকে আইএসএলের দিনক্ষণও এগিয়ে আসছিল। সময় ফুরিয়ে আসতে থাকে। দশটি দলের জার্সির নকশা জমা পড়ে গেলেও তার মধ্যে ছিল না লাল-হলুদ। তা হলে ইস্টবেঙ্গলকে কি এ বারও আই লিগ খেলে সন্তুষ্ট থাকতে হবে? মোহনবাগান খেলবে সর্বোচ্চ লিগ আইএসএলে আর ইস্টবেঙ্গল থাকবে কার্যত দেশের দ্বিতীয় লিগে রুপান্তরিত আই লিগে? নানা প্রশ্ন ঘুরতে থাকে।  

ছবি: the telegraph india


প্রায় হাতের বাইরে চলে যাওয়া ‘ম্যাচ’ ইস্টবেঙ্গলের অনুকূলে ফিরিয়ে আনার পিছনে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আইএসএল কর্তৃপক্ষের বিশেষ উদ্যোগ। আইএসএলের পরিচালক মুকেশ অম্বানীর সংস্থা। লিগের কর্ণধার নীতা অম্বানী। নতুন লগ্নিকারী সংস্থাকে আনার ব্যাপারে নীতার বড় ভূমিকা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কয়েক মাস আগেই লগ্নিকারী সংস্থার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা। শোনা যাচ্ছে, মুকেশ অম্বানীর কাছে তার পরেই ফোন যায়। ইস্টবেঙ্গলের বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানানো হয়। 
অনেকের মনে থাকতে পারে, আইএসএলের উদ্বোধনে যুবভারতীতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধান অতিথি করে নিয়ে এসেছিলেন অম্বানীরা। জানা গিয়েছে, বিশেষ ফোনের পরে ইস্টবেঙ্গলের আইএসএল খেলার পথ প্রশস্ত করতে উদ্যোগী হন স্বয়ং নীতা। নতুন লগ্নিকারী সংস্থা খোঁজার কাজ শুরু হয়। কয়েক জনের সঙ্গে কথা হয়েও চূড়ান্ত রূপ নেয়নি। শেষ পর্যন্ত বাংলারই এক সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মহালগ্ন উপস্থিত। দু’পক্ষের কথাবার্তা কার্যত চূড়ান্ত এবং আনন্দবাজারের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী, সইসাবুদও হয়ে যাওয়ার মুখে।

যা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাতে এটিকে – মোহনবাগানের মতোই চুক্তির নকশা হতে যাচ্ছে ইস্টবেঙ্গল এবং নতুন লগ্নিকারী সংস্থার। লগ্নিকারী সংস্থার অংশীদারিত্ব থাকবে আশি শতাংশ, ক্লাবের কুড়ি শতাংশ। বোর্ডে লগ্নিকারী সংস্থার সদস্য থাকবেন ছ’জন, ক্লাবের দু’জন। আশি শতাংশ চলে যাওয়ায় মোহনবাগানের মতোই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবও তাদের অস্তিত্ব হারাতে চলেছে কি না, তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক উঠতে পারে। কিন্তু আপাতত, আইএসএল খেলা এবং দেশের সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবলে  নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষাই মুখ্য হয়ে উঠেছিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সামনে। বিশেষ করে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী সবুজ-মেরুন আইএসএল খেলা নিশ্চিত করে ফেলায় সংকটের মুখে পড়েছিল লাল-হলুদ। মোহনবাগানের মতোই তাই নিজেদের অংশীদারিত্বের ভাগ কমিয়ে এ ভাবে নতুন লগ্নিকারী সংস্থা আনা ছাড়া উপায়ও ছিল না তাদের। 
যা দাঁড়াচ্ছে, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই নতুন লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তির কথা ঘোষণা করে নতুন কোম্পানি গঠন করবে ইস্টবেঙ্গল। তার পরেই আইএসএল খেলার পদক্ষেপ শুরু করবে তারা। রাতারাতি এই পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই বলে দেওয়া যেতেই পারে, ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে এ বারের আইএসএলে মোট ১১টি দলকে দেখতে পাওয়া কার্যত নিশ্চিত। লিগ শুরু হতে পারে নভেম্বরের শেষ দিকে এবং কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই যে, সূচি প্রকাশিত হলেই ফুটবলভক্তরা প্রথম কোন ম্যাচের তারিখ খুঁজবেন। 
ডার্বি কবে আছে? 
কবে আছে ডার্বি?  

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mamata Banerjee, #mukesh ambani, #East Bengal Club, #Neeta Ambani, #indian super League

আরো দেখুন