রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

মমতার স্বপ্নের ছাপাখানার ঝাঁপ ফেলছে মোদি সরকার

September 3, 2020 | 2 min read

আধুনিকতার যাত্রা শুরু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে। আর ঝাঁপ বন্ধের ঘণ্টা বাজল নরেন্দ্র মোদির জমানায়। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রেলের পাঁচটি ছাপাখানা। এ বছরের মধ্যেই। শেষবার রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম উদ্যোগী হয়েছিলেন আধুনিকীকরণের জন্য। সংসদে উল্লেখ করার পরই তোড়জোড় শুরু করেছিলেন বিদেশ থেকে দামি মেশিন আনার। পরবর্তীকালে তাঁর দেখানো পথেই মোদি সরকারের জমানায় ৭৫ কোটি টাকা খরচ করে রেলের পাঁচটি নিজস্ব ছাপাখানায় বসানো হয় সেই অত্যাধুনিক রোটাটেক অফসেট মেশিন। কিন্তু এখন সেই সব ছাপাখানা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেল-কর্তৃপক্ষ। দামি মেশিনগুলি হস্তান্তর করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেই।

কয়েক হাজার কর্মীবিশিষ্ট রেলের এই বিশাল ছাপাখানাগুলির ঝাঁপ বন্ধ হওয়ার কথা ছিল আগেই। প্রথমে সময়সীমা ছিল ৩১ মার্চ। কর্মীদের অসন্তোষ বুঝে তা তিন মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। করোনা ভাইরাসের আগমনের পর এখন ৩১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত সময়সীমা ধার্য করেছে রেলবোর্ড। শুধু তাই নয়, এই ছ’মাসের মধ্যে মেশিনগুলি টাকা ছাপার সরকারি সংস্থা সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড মিন্টিং কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেডকে হস্তান্তর করার জন্য চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আদেশও তারা দিয়েছে। ফলে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের পাশাপাশি দানা বেঁধেছে আশঙ্কাও। রেলবোর্ড সংশ্লিষ্ট কর্মীদের রেলেরই অন্য বিভাগে বদলি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও অনেকেই তাতে আশ্বস্ত হচ্ছে না। বিশেষত সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার বয়স্ক কর্মীদের বাধ্যতামূলক স্বেচ্ছাবসরের নামে যে ‘ছাঁটাই প্রকল্প’ সামনে এনেছে, তাতে তাঁদের কপালে আশঙ্কার মেঘ আরও ঘনীভূত হয়েছে। একসময় রেলের অধীনে দেশে মোট ন’টি ছোট-বড় প্রেস ছিল।

যাবতীয় টিকিট এবং রেলের বিভাগীয় কাগজপত্র ছাপা হতো এগুলিতে। পরবর্তী কালে চারটি অপেক্ষাকৃত ছোট প্রেস গুটিয়ে ফেলে রেল। বর্তমানে হাওড়া, সেকেন্দ্রাবাদ, চেন্নাই, মুম্বই এবং দিল্লির পাঁচটি প্রেসে পুরোদমে কাজ চলে। প্রতিদিন কয়েক লক্ষ কম্পিউটার টিকিট ছাপার জন্য স্পেন থেকে আনা হয়েছিল ওই পাঁচটি আধুনিক মেশিন। তবে পাঁচটি প্রেসে অন্যান্য কাগজপত্র ছাপার জন্য একাধিক অন্য মেশিনও রয়েছে। তারপরও অবশ্য বেশ কিছু কাল ধরে বিভাগীয় কাগজপত্র বাইরের বেসরকারি প্রেসে ছাপার বরাত দেওয়া শুরু করেছে রেল। রেল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এতগুলি প্রেস চালাতে বিপুল খরচ বইতে হচ্ছে। ছাপার কাজ আউটসোর্সিং করে দিলে সেই খরচের বোঝা অনেকটাই কমবে। দামি মেশিনগুলি তারা এজন্য সরকারি সংস্থাকেই হস্তান্তর করছে। বদলি প্রকল্প নিয়ে কর্মীদের অহেতুক আতঙ্কের কারণ নেই।

রেলের ছাপাখানাগুলির কর্মীদের নিয়ে গঠিত অন্যতম কর্মচারী ফেডারেশনের শীর্ষ নেতা বৈদ্যনাথ ভারতীর কথায়, ‘ছাপাখানাগুলি দিব্যি চলছিল। আউটসোর্সিংয়ের ফলে মোটেও খরচ কমবে না। আসলে বয়স্ক কর্মীদের প্রথমে ছেঁটে ফেলা হবে। আর কমবয়সি প্রিন্টিং টেকনোলজিস্টদের মালবাবুর মতো পদে বদলি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাতে

তাঁদের অনেকেই অপমানে কাজ ছেড়ে দেন। গোটা পরিকল্পনা কর্পোরেটদের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়ার অঙ্গ বলেই আমাদের ধারণা। এর বিরুদ্ধে আমরা শেষ পর্যন্ত লড়ব।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Mamata Banerjee, #Printing Press

আরো দেখুন