ছত্রধর ম্যাজিক? লালগড়ে বিজেপিতে ভাঙন
রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ, ছত্রধর মাহাতোকে আরও বেশি করে দলের কাজে লাগাতে হবে। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে কাজে লেগেও পড়েছেন ছত্রধর। তবে ‘অস্বস্তি’ কাটছে না কিছুতেই। বুধবার বিজেপি প্রধানের তৃণমূলে যোগদানকে কেন্দ্র করেও প্রকাশ্যে এসে গেল সেই ‘অস্বস্তি’। জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধর এই দলবদলের কৃতিত্ব দাবি করলেও ব্লক নেতৃত্ব জানালেন, এ ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়েছিলেন তাঁরাই।
বুধবার লালগড় ব্লকের বেলাটিকরি পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান জ্যোৎস্না টুডুর সঙ্গে এলাকার কয়েকজন বিজেপি নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তিলাবনি হাইস্কুল প্রাঙ্গণে রাজ্য সম্পাদক ছত্রধরের উপস্থিতিতে ওই দলবদল কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু, জেলা চেয়ারম্যান বিরবাহা সরেন, জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাহাতো, লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল মাহাতো প্রমুখ। দলবদল প্রসঙ্গে ছত্রধর বলেন ‘‘প্রধান জ্যোৎস্না টুডু বার দু’য়েক আমার বাড়িতে এসেছিলেন। আমাকে নেতৃত্বে পেয়ে শুধু প্রধানই নন, বেলাটিকরি অঞ্চলে বিজেপি-র সমস্ত পদাধিকারী ও কর্মী তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। জঙ্গলমহল জুড়ে বিজেপি-র ধস নামবে।’’ তবে লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল বলছেন ‘‘বিজেপি-র ওই প্রধান অঞ্চল নেতৃত্বের মাধ্যমে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। বিজেপি বাকি পঞ্চায়েত সদস্যরাও কয়েকদিনের মধ্যেই তৃণমূলে যোগ দেবেন।’’ ছত্রধরের দাবি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি শ্যামল।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, দলে পদপ্রাপ্তির পর রাজ্য নেতৃত্বের কাছে নিজের সক্রিয়তা প্রমাণ করতে মরিয়া ছত্রধর। তবে ঘটনাচক্রে এরপর সক্রিয় হয়েছে এনআইএ-ও। কেন্দ্রীয় সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছে ছত্রধরকে। রাজ্য নেতাদের নেকনজরে থাকলেও স্থানীয় নেতৃত্বের কাছে ছত্রধরের গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনগ্রাহ্য কি? যেভাবে একদা ছত্রধরের ছায়াসঙ্গী শ্যামল এই দলবদলে নিজের কৃতিত্ব দাবি করেছেন তাতে সেই জোরাল হয়েছে জল্পনা।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘বেলাটিকরি অঞ্চলের বিজেপি প্রধান ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কয়েকদিন ধরেই কথাবার্তা চলছিল। স্থানীয় নেতৃত্ব তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। মঙ্গলবার শ্যামল আমাকে ফোন করে জানান বুধবার বিজেপি-র লোকজন তৃণমূলে যোগ দিতে চান।’’
জ্যোৎস্না বলছেন, ‘‘বিজেপি-র স্বেচ্ছাচার মানতে না পেরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।’’ জেলা বিজেপি-র সভাপতি সুখময় শতপথীর কটাক্ষ, ‘‘দুর্নীতিগ্রস্ত বহিষ্কৃত প্রধানকে নিয়ে তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে লড়াই চলছে।’’ বেলাটিকরি পঞ্চায়েতের ১৩ আসনের মধ্যে ১০টিতে জিতেছিল বিজেপি। তৃণমূলের আছেন ৩ জন।
চেনা মুখ ছত্রধর। তাঁকে কাজে লাগাতে মরিয়া তৃণমূল। কিন্তু এ কাজে চেনা রোগ (দলীয় দ্বন্দ্ব) বেড়ে যাবে না তো! ফুটেছে কাশফুল। তবু যাই যাই বর্ষাতেও ভাদ্রের আকাশে মাঝে মাঝে উঁকি মারছে জমাটি মেঘ।