থাকবে এই চারটি ব্যাঙ্ক, বাকিগুলো বিক্রির পথে কেন্দ্র
ব্যাঙ্কিং সেক্টরে বড়সড় সংস্কারের পথে হাঁটতে চাইছে কেন্দ্র। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক পরিচালন ব্যবস্থাকে কর্পোরেট ধাঁচের করে তোলা এবং একঝাঁক ব্যাঙ্ককে ধীরে ধীরে বেসরকারিকরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে মোদি সরকার। শুধু তাই নয়, আরও কিছু ব্যাঙ্ককে পরস্পরের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হবে। আর আসছে স্বেচ্ছাবসর সংক্রান্ত তাৎপযপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ইতিমধ্যেই স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া নতুন স্বেচ্ছাবসর প্রকল্প ঘোষণা করেছে। অন্য কয়েকটি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও বিশেষ অবসর প্রকল্প চালুর প্রস্তুতি চলছে। মাথা ভারী প্রশাসনিক প্রক্রিয়া কমাতেই এই পরিকল্পনা।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্ক সংস্কার সংক্রান্ত একটি ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে সরকারকে জমা দিয়েছে নীতি আয়োগ। এর আগে চলতি আর্থিক বছরেই ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে পরস্পরের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে চারটি ব্যাঙ্কে পরিণত করা হয়েছিল। এবার ব্যাঙ্কের সংখ্যা ও ব্যাঙ্কিং সেক্টরের আয়তন আরও কমানো হবে। সরকার চাইছে, সরাসরি চারটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যাঙ্ক থাকবে সরকারের হাতে। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব বরোদা এবং কানাড়া ব্যাঙ্ক। পাঞ্জাব অ্যান্ড সিন্ধ ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব মহারাষ্ট্র, ইউকো ব্যাঙ্ককে বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইডিবিআই ব্যাঙ্কের বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তও আগে হয়েছে। আর বাকি কিছু ব্যাঙ্কের অংশীদারিত্ব বিক্রি করে বেসরকারিকরণ হবে। প্রাথমিকভাবে ২৬ শতাংশ শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করা হবে। বাকি অংশ থাকবে সরকারের হাতেই। এই বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া যদি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে সেগুলিও মিশিয়ে দেওয়া হবে চারটি প্রধান ব্যাঙ্কের সঙ্গে। তবে স্বেচ্ছাবসরের পর। ব্যাঙ্কিং সংস্কারের অন্যতম প্রধান পরিকল্পনা হবে স্বেচ্ছা অবসর প্রকল্প। স্টেট ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই সেকেন্ড ইনিংস ট্যাপ ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট স্কিম ঘোষণা করেছে।
প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে এই প্রকল্প তিন মাসের জন্য চালু থাকবে। এই স্বেচ্ছা অবসর প্রকল্পে আগ্রহীরা আবেদন করবেন। তাঁদের যতদিন চাকরির মেয়াদ রয়েছে, সেই সময়সীমার মোট প্রাপ্য বেতনের ৫০ শতাংশ দেওয়া হবে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক হিসেবে। স্টেট ব্যাঙ্কের প্রায় আড়াই লক্ষ কর্মী রয়েছেন দেশজুড়ে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের পর লকডাউন পর্বে বহু কর্মী নিয়মিত অফিসে যাতায়াত করতে পারছেন না। একইসঙ্গে একটি শহর থেকে অন্য শহরে বদলি প্রক্রিয়াও আটকে যাচ্ছে। এই কারণে গত পাঁচ মাসে স্বেচ্ছা অবসর সংক্রান্ত আবেদন জমা পড়ার প্রবণতা অনেক বেড়ে গিয়েছে।
এমতাবস্থায় বেশ কিছু ব্যাঙ্কেই তুলনামূলক বয়স্ক এবং অসুস্থ কর্মী-অফিসারদের অবসর গ্রহণের বিকল্প উপায় দেওয়া হবে বলে স্থির হয়েছে। এভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির কর্মীসম্পদের গড় বয়স কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্ক কর্মী ও অফিসারদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা চালু হবে। বিশেষ করে ডিজিটাল ফ্রড, লোন ট্র্যাকিং ইত্যাদি বিভাগকে শক্তিশালী করতে চায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে অর্থমন্ত্রকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, ব্যাঙ্ক ও রাষ্ট্বায়ত্ত সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণ ও সংস্কার প্রক্রিয়ায় কেন দেরি হচ্ছে? এরপরই দ্রুত একটি প্ল্যান তৈরির পথে অগ্রসর হয়েছে নীতি আয়োগ ও অর্থমন্ত্রক।