মাত্র দু’মাস, বাংলায় থাকবে না কোনও অনুন্নত গ্রাম!
‘অনুন্নত’ নয়, চাই ‘উন্নত’—একুশকে পাখির চোখ করেই এবার গ্রামোন্নয়নে ঝাঁপিয়ে পড়ল পঞ্চায়েত দপ্তর। লক্ষ্যমাত্রা দু’মাস। নভেম্বরের মধ্যেই উন্নয়নের প্রথম সারিতে টেনে তুলতে হবে রাজ্যের পিছিয়ে পড়া গ্রামগুলিকে। এমনটাই চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ আগামী দু’মাসের মধ্যে বাংলায় আর থাকবে না কোনও ‘অনুন্নত’ গ্রাম।
পঞ্চায়েত দপ্তরের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই মুহূর্তে রাজ্যে পিছিয়ে রয়েছে ৬৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত। বছরে বরাদ্দকৃত প্রায় দু’কোটি টাকা ঠিকঠাক খরচ করতে পারেনি এই পঞ্চায়েতগুলি। ফলে তাদের অন্তর্ভুক্ত বহু গ্রামেই উন্নয়নের আঁচ লাগেনি বলে এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে। এবার ওই সব ‘অনুন্নত’ গ্রামকে চিহ্নিত করে উন্নয়নের কাজ শুরু হচ্ছে। এর জন্য প্রতিটি পঞ্চায়েতে নিয়োগ করা হয়েছে চারজন করে মেন্টর। তাঁদের ভার্চুয়াল প্রশিক্ষণের কাজও শেষ। উন্নত গ্রাম গঠনে বিভিন্ন প্রকল্পের রূপরেখা তৈরি করবেন মেন্টররাই।
রাজ্যে মোট গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা তিন হাজার ২২৯। কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ আর্থিক সহযোগিতায় পঞ্চায়েত এলাকার উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলে। আবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে ‘প্রাতিষ্ঠানিক স্বশক্তিকরণ গ্রাম পঞ্চায়েত কর্মসূচির (আইএসজিপিপি) মাধ্যমে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের আর্থিক মদতে এই কর্মসূচির কাজ চলছে রাজ্যে। প্রতি বছরই উন্নয়নের নিরিখে পঞ্চায়েতগুলির কাজের মূল্যায়ন করে পঞ্চায়েত দপ্তর। গত বছরের মূল্যায়নের ভিত্তিতে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের মোট গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২০ শতাংশ পঞ্চায়েত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজকর্মে পিছিয়ে পড়েছে। সেই হিসেবে প্রায় ৬৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত অপেক্ষাকৃত ‘অনুন্নত’। সেগুলির সামগ্রিক উন্নয়নকেই এবার বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য।
উন্নয়ন পরিকল্পনার তালিকায় থাকছে একাধিক কর্মসূচি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পানীয় জলের সমস্যা মেটানো, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি। এছাড়াও হিসেব রক্ষণাবেক্ষণ, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার উপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে। শুক্রবার পঞ্চায়েত দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি মাপকাঠির উপর নির্ভর করে কোন পঞ্চায়েত কতটা এগিয়ে কিংবা পিছিয়ে। তাতে যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত পিছিয়ে পড়েছে, তার একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। সেই মতো গৃহীত হয়েছে পরিকল্পনা।
পঞ্চায়েত পিছু প্রতি বছর বরাদ্দ হয় প্রায় দু’কোটি টাকা। তালিকাভুক্ত পিছিয়ে পড়া পঞ্চায়েতগুলি পরিকল্পনামাফিক সেই টাকা খরচ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এবার বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ করে ওই পঞ্চায়েতগুলিকে উন্নয়নের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে প্রকল্প গ্রহণ ও দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে মানতে হবে রাজ্যের গাইডলাইন। নিয়ম অনুযায়ী ৫ লক্ষ টাকার বেশি কোনও প্রকল্পের কাজ করতে হবে ই-টেন্ডার ডেকে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করে এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে পঞ্চায়েত দপ্তর। ওই বৈঠকে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরাও যোগ দিয়েছিলেন।