হচ্ছে টা কী? বিভাগে ফিরে যান

এনকাউন্টার প্রদেশ! দেখুন যোগী রাজ্যের অরাজকতার হাল

September 7, 2020 | 2 min read

২০১৭ সালের মার্চে যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে উত্তরপ্রদেশ যে কার্যত এনকাউন্টার প্রদেশে পরিণত হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যোগীরাজ্যের এই এনকাউন্টার নিয়ে বারবার খবরও হয়েছে। সম্প্রতি ডন বিকাশ দুবে এনকাউন্টার নিয়ে সারা দেশে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। প্রশ্নও উঠেছিল নানা স্তরে।

এই পরিস্থিতিতে চমকে দেওয়ার মতো তথ্য প্রকাশ্যে এল। তা হল ক্ষমতায় আসার পর থেকে যোগীর রাজে উত্তরপ্রদেশে মোট ৬২০০টি এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটেছে। আর তাতে মৃত্যু হয়েছে মোট ১২৪ জনের। যদিও সরকারি হিসেবে পরিসংখ্যানকে ইতিবাচক করেই দেখানো হয়েছে। তথ্য বলছে, ৬২০০টি এনকাউন্টারে ১৪ হাজারের বেশি অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২৩০০ অপরাধী ও প্রায় ৯০০ পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন।

তবে, এনকাউন্টারে মৃত্যুর পরিসংখ্যান রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। ১২৪ মৃতের মধ্যে জাতিগত ভিত্তিতে মুসলিম ছিলেন ৪৭ জন, ব্রাহ্মণ ছিলেন একজন, যাদব সম্প্রদায়ের ৮ জন আর বাকি ৫৮ জনই ঠাকুর ও দলিত সম্প্রদায়ের। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই এনকাউন্টারের সিংহভাগই ঘটেছে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে। মেরঠে এনকাউন্টারে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের, উত্তপ্ত মুজাফফরনগরে ১১, সাহারানপুরে ৯ জন, অপরদিকে পূর্বের আজমগড়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। উত্তরপ্রদেশে সংখ্যালঘুদের বেছে বেছে এনকাউন্টার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে আগেও। আদালতেও এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসনকে। সেইসঙ্গে এই এনকাউন্টার গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জন পুলিশকর্মীরও।

বিকাশ দুবের এনকাউন্টারের পর উত্তরপ্রদেশের এডিজি আইনশৃঙ্খলা প্রশান্ত কুমার বলেছিলেন, ‘দুষ্কৃতী দমনে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছি। কাউকে ছাড়া হবে না।’ সূত্রের খবর, প্রতিটি জেলার দুষ্কৃতীদের জন্যে আলাদা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যাঁদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ‘অপারেশন ক্লিন’ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে খবর।

যোগী প্রশাসনের এই ‘এনকাউন্টার রীতি’-এর কারণে একটা সময় ১২ হাজার দুষ্কৃতী জামিন নিতে অস্বীকার করেছিলেন। অনেকেই সরাসরি আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। শুধু পুলিশ নয়, স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের অভিযানেও আরও ৯ দুর্বৃত্ত নিহত হয়েছিলেন মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে। রাজনৈতিক পালাবদলের পর যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হয়েই পুলিশকে ‘অসীম’ স্বাধীনতা দেন। প্রকাশ্যেই তিনি ঘোষণা করেন, রাজ্যে অপরাধীদের মোকাবিলায় পুলিশকে ‘ফ্রি হ্যান্ড’ দেওয়া হল। সেই ট্র্যাডিশন অনুযায়ীই চলছে ‘এনকাউন্টার-রাজ’!

যদিও এত এনকাউন্টার সত্ত্বেও রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলা কিন্তু বজায় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন যোগী আদিত্যনাথ। খুন, ধর্ষণ-সহ একাধিক ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই শিরোনামে আসছে উত্তরপ্রদেশ। কানপুরে বিকরু গ্রামে গ্যাংস্টার বিকাশ দুবে ও তার দলবলের হাতে আট পুলিশকর্মী নিহত হওয়ার পর থেকেই উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সেইসঙ্গে রাজ্যে মেয়েদের উপর হিংসার ঘটনা দিনদিন বেড়েই চলেছে। স্বাভাবিক কারণেই চাপে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। যোগীর সঙ্গে বিজেপিও বিরোধীদের নিশানায়।

গতকালই উত্তরপ্রদেশে নারী নির্যাতন নিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ফেসবুকে লেখেন, ‘বুলন্দশহর, হাপুর, লক্ষিমপুর-খেরি ও গোরক্ষপুর- এই চারটি ঘটনাই প্রমাণ করে মেয়েদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ যোগী সরকার। দুষ্কৃতীদের মধ্যে রাজ্যের আইন-পুলিশ প্রশাসন নিয়ে কোনও ভয় নেই। তারা কোনও কিছুর তোয়াক্কা করছে না। পুলিশ-প্রশাসন সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। দুষ্কৃতীরাজ চলছে।’

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Uttar Pradesh, #yogi adityanath, #Envounter

আরো দেখুন