১২’র পর আর পূর্ণ লকডাউন নয়
রাজ্যে আর ‘কমপ্লিট লকডাউন’ নয়। আগামী দিনে লকডাউন হোক, কিন্তু শুধু কন্টেইনমেন্ট জোনে। আপাতত এই পথেই হাঁটতে চাইছে রাজ্য। তবে পূর্ব ঘোষণা মতো ১১ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) ও ১২ই (শনিবার) সম্পূর্ণ লকডাউন হচ্ছে। ১৩ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ রবিবার সর্বভারতীয় মেডিক্যালের প্রবেশিকা পরীক্ষা ‘নিট’। তার আগের দিন লকডাউনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আর্জি রেখেছেন অভিভাবকরা। তবে সংক্রমণের গ্রাফে তালা ঝোলানো নিশ্চিত করতে তেমন কিছু ভাবনায় নেই রাজ্যের। তার মানে ধরে নেওয়া যাচ্ছে, চলতি সপ্তাহের শেষে পর পর দু’দিন লকডাউন হচ্ছে। তার পর কোভিড সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙার এই মোক্ষম অস্ত্র আর ব্যবহার নাও করতে পারে রাজ্য। বরং স্বাস্থ্যবিধি মানাতে চালু হবে কড়া দাওয়াইয়ের ‘গাইডলাইন’। বাধ্যতামূলক হচ্ছে মাস্কে মুখ ঢাকা। দূরত্ববিধি বজায় রাখতে শুরু হচ্ছে বাড়তি নজরদারিও।
সোমবার ছিল রাজ্যে সাপ্তাহিক লকডাউন। কোভিডের বাড়বাড়ন্ত রুখতে নবান্নের এই ছকভাঙা সিদ্ধান্তে সুফলও মিলেছে। কমেছে সংক্রমণ। কমেছে কন্টেইন্টমেন্ট জোন। কলকাতা সহ জেলাগুলির পরিস্থিতিও ক্রমেই ভালো হচ্ছে। তাহলে কেন মাঝপথে ‘সম্পূর্ণ লকডাউন’-এর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার ভাবনা? এদিন নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, টানা প্রায় আড়াই মাসের লকডাউনে দফারফা হয়েছে রাজ্যের অর্থনীতির। তার উপর উম-পুনের তাণ্ডব। এক সঙ্গে জোড়া ধাক্কা। মাস ফুরোলেই পুজো। বহু মানুষের রুজিরুটি পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে। কোভিড সামলাতে গিয়ে উৎসব-অর্থনীতি জলাঞ্জলি হয়ে যাক, তা আর চাইছে না রাজ্য। তা ছাড়া ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে রাজ্যবাসী এখন অনেক সতর্ক। সচেতনতা বেড়েছে। ফলে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার এই মুহূর্তে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। লকডাউন থেকে সরে আসার ভাবনা-চিন্তা করার এটাই উপযুক্ত সন্ধিক্ষণ। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে, নবান্নের শীর্ষ এক আধিকারিকের স্পষ্ট ইঙ্গিত—১২ সেপ্টেম্বরের পরে সম্পূর্ণ লকডাউনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাঁর যুক্তি, কোভিড সংক্রমণের সামগ্রিক পরিস্থিতি আগের থেকে যথেষ্ট ভালো।
যুক্তি শুধু কথায় নয়। সরকারের প্রকাশিত কোভিড সংক্রান্ত বুলেটিনের তথ্যও বলছে, পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক। রাজ্যে কোভিড হানার প্রথম ঘটনা ধরা পড়ে ১৭ মার্চ। সেই থেকে সংক্রমণ হু হু করে বাড়তে থাকে কলকাতায়। পরে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী হাওড়া, হুগলি ও দুই ২৪ পরগনায়। এই পাঁচটি জেলাকে একটি ‘ক্লাস্টার’ হিসেবে চিহ্নিত করে মোকাবিলায় নামে নবান্ন। এক একটি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয় অভিজ্ঞ আইএএস অফিসারদের। যেমন, কলকাতার দায়িত্বে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলাগুলিতে সংক্রামিত এলাকাভিত্তিক কন্টেইন্টমেন্ট জোন গড়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তাঁরা। তাতে দেখা গিয়েছে, যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে সংক্রমণ বাড়ছিল, তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। কমেছে কন্টেইন্টমেন্ট জোনের সংখ্যাও। বুলেটিনের তথ্য বলছে, গত ২৩ আগস্ট কলকাতায় কন্টেইন্টমেন্ট জোন ছিল ১৭টি। সংখ্যাটি সাতে নেমে আসে মাত্র পাঁচদিনে। গতকাল সেটা হয়ে দাঁড়ায় এক। একইভাবে হাওড়ায় কন্টেইন্টমেন্ট জোন ৮১ থেকে কমে হয়েছে ৭৪টি। উত্তর ২৪ পরগনায় ছিল ৭৫টি। এখন সেটা নেমে এসেছে ৩১-এ। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হুগলির সংখ্যা একই রয়েছে। অন্যান্য জেলাতেও কন্টেইন্টমেন্ট জোনের সংখ্যা কমেছে। ঝাড়গ্রামে এখন একটি। পূর্ব মেদিনীপুরে ২৭টি। পশ্চিম বর্ধমানে নেই। নদীয়ায় ছিল ৪৯৪টি। কমে হয়েছে ৪৮৪টি। জলপাইগুড়িতে ১৪টি। পূর্ব বর্ধমানে জোনের সংখ্যা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, ৩৫০টি। সব মিলিয়ে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গোটা রাজ্যেরই পরিস্থিতি মোটের উপর ভালো। ‘কমপ্লিট লকডাউন’-এর পথে না গিয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এটাই সুবর্ণ সুযোগ বলে মনে করছেন নবান্নের আধিকারিকরা।