পাহাড়ের হোটেলে শুরু পুজোর বুকিং
কালো মেঘের চাদর সরিয়ে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা মাঝেমধ্যেই উঁকি দিচ্ছে। নদীর ধারে বাতাসে দোলা লাগছে কাশফুলে। করোনা আবহের মাঝেই পুজোর গন্ধ। কিন্তু এসবের মধ্যেও মন খারাপ পাহাড়ের পাকদণ্ডী পথে। অন্যান্য বছর এই সময় পর্যটকদের আনাগোনায় মুখর থাকে উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও ডুয়ার্স। কিন্তু করোনার থাবায় এবার অন্য ছবি। সংক্রমণের শঙ্কায় এবার টানা প্রায় ছ’মাস পর্যটকশূন্য শৈলরানি দার্জিলিং পাহাড়। পর্যটকের দেখা নেই সবুজে ঢাকা ডুয়ার্সেও। যদিও করোনা আতঙ্কের মাঝে পাহাড়ে হোটেল, রেস্তরাঁ চালুর নির্দেশিকা মেলায় আশায় বুক বাঁধছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা। পুজোর বুকিং নিয়ে খোঁজখবরও বেড়েছে কয়েকগুণ। বিষণ্ণতা কাটিয়ে পুজোর মধ্যে অনেকটাই স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে পরিস্থিতি, এমনটা আশায় ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি।
হোটেলের পরিচ্ছন্নতা বা সুরক্ষা বিধি কেমন? ভিড় বেশি নেই তো? হোম স্টের কর্মীরা স্বাস্থ্যবিধি কতটা মেনে চলবেন? হোটেল ঠিকমতো স্যানিটাইজ হচ্ছে তো? দিন কয়েকের জন্য ঘুরতে গেলে কোনও সমস্যা হবে না তো? পাহাড়ের হোটেলগুলিতে এখন এমন ফোন আসতে শুরু করেছে। হাসিমুখে জবাবও দিচ্ছেন হোটেলের কর্মীরা। আর এতেই পুজোর মুখে উত্তরের পর্যটনে আশার আলো দেখছে ওয়াকিবহাল মহল। করোনা পরিস্থিতির মাঝে পাহাড়ে পর্যটকদের জন্য হোটেল চালু হওয়ায় খুশির হাওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যেও। দার্জিলিং হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজয় খান্না বলেন, অন্যান্যবার এই সময় পুজোর বুকিং হাউসফুল হয়ে যায়। এবার বুকিং নেই। এতদিন তো পাহাড়ে পর্যটন ব্যবসা বন্ধ ছিল। পর্যটকদের পাহাড়ে আসার ছাড়পত্র মিলতেই ফোন আসতে শুরু করেছে। আমরা আশা করছি, পুজোর মুখে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে।
উত্তরবঙ্গে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংস্থা হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট স্যান্যাল বলেন, পুজোর মরশুমে পাহাড় ও ডুয়ার্সে গড়ে দিনে ১০ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয়। জানুয়ারি থেকে পুজোর বুকিং শুরু হয়ে যায়। এবার তো করোনার দাপটে পর্যটন ব্যবসার কোমর ভেঙে পড়েছে। তবে এর মাঝেও পাহাড় খোলায় খুশি পর্যটকরা। যাবতীয় সুরক্ষাবিধি মেনে আমরা পাহাড়ে পর্যটকদের নিয়ে আসতে চাই।
ডুয়ার্স ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব বলেন, ডুয়ার্সে পর্যটকদের আনাগোনা কিছুটা ছিল। পুজোর বুকিং এখনও সেভাবে শুরু না হলেও মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। আমরা আশা রাখছি, পুজোয় পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে।
অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজমের আহ্বায়ক রাজ বসু বলেন, পুজোর মরশুমে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। পর্যটকদের খোঁজখবর নেওয়া বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা সুরক্ষা আর সুবিধার কথা মাথায় রেখে গ্রামীণ এলাকায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করব। ডুয়ার্সে আমরা এরআগে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ক্যাম্পও করেছি। দার্জিলিংয়ে প্রায় সাড়ে তিনশোর মতো হোটেল রয়েছে। পাহাড় ও ডুয়ার্স মিলিয়ে প্রায় হাজার তিনেক হোম স্টে ও গ্রামীণ হোটেল আছে। এই পরিস্থিতে পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ থাকায় চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। পাহাড়ের হোটেল, রেস্তরাঁ খোলা নিয়ে বিস্তর জলও গড়ায়। কিন্তু শেষমেশ হোটেল খোলার সিদ্ধান্তে খানিকটা স্বস্তি উত্তরের বাতাসে।