সীমান্তে যুদ্ধের দামামা, চিনের বিরুদ্ধে রাফাল নিয়ে তৈরি ভারত
চীনের প্রতিটি সীমান্তে হাই অ্যালার্ট। মঙ্গলবার থেকে লাদাখ, অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিমে হঠাৎ করে সেনা তৎপরতা। ৪ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্টে ভারত ও চীনের সেনার মধ্যে এই মুহূর্তে দূরত্ব মাত্র ২৫০ মিটার। দু’পক্ষই যেভাবে সীমান্তে বিপুল সেনা, রসদ ও ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্র্যাফ্ট আনছে, তাতে একটাই শব্দবন্ধ ব্যবহার করা যায়—যুদ্ধ পরিস্থিতি। সোমবার গোদ পাও পাহাড়ি অঞ্চলের নদীতীরে ভারত ও চীনের সেনার নতুন করে সংঘাত হয়। ৪৫ বছর পর চীন-ভারত সীমান্তে হয়েছে গুলিবর্ষণ। সেটাই ছিল সূত্রপাত। তারপরই দু’পক্ষ চরম আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে বিপুল সংখ্যায় সেনা মুভমেন্ট এবং ফাইটার জেটের লাগাতার উড়ান বাড়িয়ে দিয়েছে। বুধবার তিব্বতের হোটন এয়ারবেস থেকে দিনভর জে-২০ ফিফথ জেনারেশন যুদ্ধবিমান উড়িয়েছে চীন। পাল্টা জবাব দিয়েছে ভারতও। পূর্ব লাদাখ ও গলওয়ান উপত্যকার অভিজ্ঞতার পর ভারতের অতি সক্রিয়তায় চীন যথেষ্ট বিস্মিত। সেই সক্রিয়তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে মঙ্গলবার থেকে সীমান্ত ও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার আকাশে ভারতের সুখোই ৩০, মিগ ২৯ এবং মিরাজ ২০০০ উড়ছে। অ্যাপাচে অ্যাটাক হেলিকপ্টার আর চিনুক হেভি লিফট নতুন করে মোতায়েন করা হয়েছে দু’টি ফরওয়ার্ড বেসে।
ভারতীয় বায়ুসেনা নাইট টাইম কমব্যাট এয়ার পেট্রলিং শুরু করেছে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই। প্যাংগং লেক, গোগরা, হট স্প্রিং এলাকায় নাইট টাইম পেট্রলিং এবং প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তের প্রায় সব পাহাড় চূড়ায় ভারতের দখলদারি। এই দুই ধাক্কায় স্ট্র্যাটেজিকভাবে তীব্র সঙ্কটে চীন। ইতিমধ্যেই প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে ৩ হাজার ৫০০ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ভারত চাইছে সেই সংখ্যা ৫ হাজার ৫০০তে নিয়ে যেতে। ফলে, চীনের যে কোনও সেনা মুভমেন্টই চলে আসছে ভারতীয় সেনার নজরদারিতে।
এর মধ্যেই তাৎপর্যপূর্ণ হল, আজ ভারতীয় বায়ুসেনার গোল্ডেন অ্যারো স্কোয়াড্রনে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে রাফাল এয়ারক্র্যাফ্ট। যা এক ধাক্কায় ভারতের বায়ুসেনার আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দেবে। আম্বালা এয়ার বেসে হাই প্রোফাইল এক অনুষ্ঠানে এই রাফাল অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অন্তর্ভুক্তির অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লিও। আম্বালা থেকে দু’টি রাফাল সোজা উড়িয়ে আনা হবে লে এয়ার স্ট্রিপে। ভারতীয় বাহিনীর সাম্প্রতিক তৎপরতা ও অতি সক্রিয়তায় লাদাখে এই প্রথম চীন রীতিমতো আতঙ্কিত। এতদিন সীমান্ত সংঘাতে চীনের আগ্রাসী মনোভাব অথবা অনুপ্রবেশের চেষ্টা ভারত প্রতিরোধ করে এসেছে। কিন্তু এভাবে ভারতীয় সেনার আগ্রাসী মনোভাব দেখা যায়নি। পূর্ব লাদাখের তিনটি অংশে প্রায় হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় লালফৌজ ঢুকে আসার পর এবার প্যাংগং লেকের দক্ষিণ প্রান্তে একের পর এক পাহাড়ের চূড়া ভারতীয় সেনা দখল করে নিয়েছে। আর এই অংশে ভারত সুবিধাজনক অবস্থানে। কারণ চীন সম্পূর্ণ পিছু হটে পুনরায় পূর্ব লাদাখকে টার্গেট করেছে। ইতিমধ্যেই ৩ নম্বর ফিঙ্গার পয়েন্টে চীন রীতিমতো যুদ্ধ সরঞ্জাম নিয়ে এসেছে। খনন করা হয়েছে চারটি বাঙ্কার।
পাল্টা ভারত সেনা মোতায়েন করেছে আরও তিনটি ফিঙ্গার পয়েন্টে। মোট তিনটি ফিঙ্গার পয়েন্টে একপ্রকার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে ভারতীয় বাহিনী ও লালফৌজ। কৈলাস রেঞ্জের সাকা লা থেকে শুরু করে যে পাহাড় চূড়াগুলি ভারতের সেনার দখলে চলে এসেছে সেগুলি হল, ব্ল্যাক টপ, হেলমেট, গুরুং হিল, মাগর হিল, মুখাপারি, রেজাং লা, রেচিন লা। ফলে বিপুল পরিমাণ যুদ্ধ রসদ ও সরঞ্জাম নিয়ে এলেও সেগুলি প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছের ভুমিখণ্ডে পৌঁছতে পারছে না চীন। পেরতে পারছে না নিয়ন্ত্রণ রেখাও। লাদাখে ভারতকে অনেক বেশি ব্যস্ত রেখে অরুণাচল প্রদেশ ও সিকিমে যাতে বেজিং ঝটিকা হামলা করতে না পারে, তাই বুধবার থেকেই উত্তর-পূর্ব সীমান্তে হাই অ্যালার্ট জারি হয়েছে। সোমবার যে অস্ত্র নিয়ে লালফৌজ ঢোকার চেষ্টা করে, ১৫ জুন গলওয়ান উপত্যকার আগ্রাসনে ব্যবহার হয়েছিল সেই একই হাতিয়ার। সেই অস্ত্র একপ্রকার আদিমযুগের। গুয়ানদাও নামের ওই অস্ত্রের একটি দিকে ধারালো ব্লেড লাগানো।
প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়য় কমিটির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে চীনের বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকের প্রাক্কালে সীমান্ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠা থেকেই স্পষ্ট, এর বিশেষ সুফল পাওয়া যাবে না। একমাত্র বাকি রয়েছে সর্বোচ্চ স্তরের শান্তিবৈঠক। অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদি-জি জিনপিং সাক্ষাৎ। চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সংঘাতের পর থেকে একবারও মোদি ও জিনপিংয়ের কথা হয়নি। এবার কি হবে?