মিডিয়া ট্রায়াল – বিপন্ন গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ
মিডিয়া ট্রায়াল। সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যার পরে রিয়া চক্রবর্তীর সঙ্গে যা যা হচ্ছে সেটাকে মিডিয়া ট্রায়াল ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। প্রত্যেকটা মুহূর্তে মিডিয়া হাউসগুলো ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যুর খবর আসার পর সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে দিকে যে ফরেনসিক এক্সপার্টদের দেখা গেছিল; তারা কমবেশি খুনের তত্ত্ব নামিয়েছিল। সামনে বিহার ভোট। বিজেপি সুশান্ত সিংয়ের মৃত্যুকে পুঁজি করে ভোট চাইছে। তদন্তের ভার মুম্বাই পুলিশের হাত থেকে সটান চলে গেছে সিবিআই এর কাছে। যদিও মিডিয়াতে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী সিবিআই খুনের ষড়যন্ত্র খারিজ করেছে। এখন যা নিয়ে এই কেস উত্তাল তা হল ড্রাগস। রিয়া চক্রবর্তী, তাঁর ভাই; সবাইকেই জেরা করা হচ্ছে।
রিয়া চক্রবর্তী দোষী না নির্দোষ আমরা জানি না। কে দোষী, কে নির্দোষ; সেটা এই দেশে এক এবং একমাত্র বিচার ব্যবস্থাই ঠিক করে। দুঃখের বিষয় হল গত কয়বছরে মানুষের মানসিক গঠন এমন ভাবেই পরিবর্তিত হয়েছে যে এই কথাটা মানুষ ভুলে যাচ্ছে। ফেক এনকাউন্টারের পক্ষেও জনগণ গলা ফাটিয়েছে। মিডিয়ায় সাংবাদিক সেজে বসে থাকা কিছু লোকজন কী বললো, কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় নোটবাতিলের পর হয়ে যাওয়া অর্থনীতিবিদরা আজ অপরাধ বিশেষজ্ঞ হয়ে গিয়ে কী বললো; তাতে সত্যি মিথ্যার বিচার হয় না। রিয়া চক্রবর্তী “নির্দোষ”। হ্যাঁ, কোর্ট যতক্ষণ না কাউকে দোষী সাব্যস্ত করছে; ততক্ষণ সে নির্দোষ। এটা ন্যাচারাল জাস্টিসের একেবারে মূল বিষয়।
তবে একটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সমাজে বিচারব্যবস্থার বাইরেই কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলার মানসিকতা তৈরির পিছনে বলিউডের সিনেমার বিশাল প্রভাব আছে। সে পুলিশের দ্বারাই হোক কিংবা মিডিয়ার দ্বারা। আজকে সেই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত একজন মানুষ নিজেই এটার সম্মুখীন। ভাবুন, বিচার করুন। যাঁরা বিচার ব্যবস্থার বাইরে পুলিশের দ্বারা কৃত বেআইনি কাজকর্মকে সিংহমপনা ভেবে আনন্দ লাভ করেন, এমনকি তার সমর্থনে গলাও ফাটান; জেনে রাখবেন হয়তো একদিন নিজেই আপনি সেই অবস্থায় মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকবেন। সুতরাং; যা বেআইনি তাকে দ্বর্থ্যহীন ভাষায় বেআইনি বলতে শিখুন।