বাম – কংগ্রেস জোটকে নিচুতলায় পৌঁছে দেওয়ার বার্তা অধীরের
কেবল রাজ্যস্তরের নেতৃত্বের মধ্যে নয়। বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে একেবারে নিচুতলায় পৌঁছে দিতে হবে বাম-কংগ্রেস জোটের শক্তিকে। আর শিক্ষা নিতে হবে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট থেকে। এই আবহ সর্বত্র তৈরি হয়নি। তার ফল ভুগতে হয়েছে উভয় শিবিরকেই। তাই আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এখন থেকে দলের পাশাপাশি ব্লক স্তরে জনস্বার্থবাহী ইস্যুগুলি নিয়ে উভয়পক্ষের যৌথ কর্মসূচির জন্য উদ্যোগী হতে হবে কংগ্রেসকে। তৃণমূল স্তরে জোটের বন্ধন মজবুত হলে দুই শাসক দলকেই জবরদস্ত টক্কর দেওয়া সম্ভব হবে। রাজ্যের কংগ্রেস বিধায়ক, জেলা সভাপতি এবং গণসংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বকে এই বার্তাই দিলেন নবনিযুক্তি প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরি। শনিবার দিল্লি থেকে দিনভর দফাওয়ারি ভার্চুয়াল বৈঠকের মাধ্যমে অধীর এই নিদান দেন। তিনি এই আলোচনায় স্পষ্ট জানিয়ে দেন, জোট করেই আগামী নির্বাচনে লড়ার ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেসের মনোভাবকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে দলের হাইকমান্ড।
অধীর এই বৈঠকে কংগ্রেসকে রাজ্যে কেবল সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করলে চলবে না বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর সাফ কথা, এখন থেকে দলকে নিয়মিত রাস্তায় থাকতে হবে। তিনি যখন যেমন সুযোগ পাবেন তখন রাজ্যে এসে এই ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার চেষ্টা করবেন বলেও প্রদেশ সভাপতি জানিয়েছেন। তাঁর এই নির্দেশের পরই প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী এক বিবৃতিতে সব জেলা সভাপতিদের আগামী ১৬ তারিখ সব জেলা ও মহকুমা সদরে বিক্ষোভে শামিল হওয়ার কর্মসূচির আয়োজন করার কথা বলেছেন। ভিন রাজ্য থেকে বাংলায় ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের কেন প্রধানমন্ত্রী গরিব রোজগার যোজনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলে সেদিন এই কর্মসূচি পালন করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। যদিও প্রদেশ সভাপতি হিসেবে তিনি রাজ্যে দলের সংগঠনকে নতুন করে সাজাবেন বলে অধীর জানাবার পর বিদায়ী কমিটির পদাধিকারী হিসেবে মনোজবাবু কীভাবে বিবৃতি দিলেন তা নিয়ে দলের অন্দরে আবার প্রশ্ন উঠেছে। দলের নেতাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে জোটের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অধীর অবশ্য একটি নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেছেন। তাঁর কথায়, ২০১৬ এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক নয়। ২০১৬ সালে যে ফর্মুলায় আসন বাঁটোয়ারা হয়েছিল ২০২১-এর নির্বাচনের সময় তা এক থাকবে না সর্বত্র। বাম ও কংগ্রেস উভয়েরই শক্তি কিন্তু তারপর বাড়েনি এরাজ্যে। তাই এবার কে, কোন আসনে লড়বে তার ছবিটা ভিন্ন হতে পারে। তবে সেই সময় আমাদের জোট কিন্তু তৃণমূলের প্রধান বিকল্প হিসেবে মানুষের সামনে এসেছিল। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় সেই জোট না হওয়ায় তার ফয়দা তুলেছিল বিজেপি। এখন তৃণমূলের উপর বাংলার মানুষ তিতিবিরক্ত। তাই মানুষ বিকল্প হিসেবে বিজেপি’কে ক্ষমতায় আনতে চাইছে—এমনটা মোটেও নয়। কোভিড পরিস্থিতির পর কেন্দ্রের সরকারের কাজকর্ম দেখে বিজেপি’র উপরও মানুষ সন্তুষ্ট নয়। তাই এই দুই শাসক দলের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে হলে জোটের বন্ধন নিচুতলায় মজবুত হওয়া জরুরি।