করোনার উত্তাপে তপ্ত রাজ্যসভা – যুযুধান কেন্দ্র-বিরোধী
দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনা শুরু হল আজ। বিতর্কিত এই বিষয়ে সরকার-বিরোধী পক্ষের মধ্যে কুরুক্ষেত্র বাঁধবে, জানাই ছিল। হলও তাই। করোনা সংক্রান্ত আলোচনায় উত্তপ্ত রাজ্যসভা। দাবি, পাল্টা দাবিতে চলছে বিতর্ক।
রাজনীতি নয়
বিজেপি সাংসদ বিনয় সহস্রবুদ্ধে নিজের ভাষণে প্রসঙ্গ তুললেন মহারাষ্ট্রের। বললেন, সরকার কেন্দ্রের সাথে সহযোগিতা করেনি, তাই সেখানে বেহাল দশা স্বাস্থ্যের। শুনেই প্রতিবাদ করেন জয়া বচ্চন। তিনি বলেন, ওনার পরিবারের সদস্যরা করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারা যে পরিষেবা পেয়েছেন তা অতুলনীয়। মুম্বাইতেও প্রশাসন তৎপরতার সাথে কাজ করছে। করোনা নিয়ে যেন রাজনীতি করা উচিত না।
ময়ূর বনাম চক
তৃণমূলের তরফে বলতে উঠে ডেরেক ও’ব্রায়েন টেনে আনেন কেন্দ্র বনাম রাজ্যের প্রসঙ্গ। তার মতে, রাজ্যগুলোর কাছ থেকে শিখতে চায়নি কেন্দ্র। বহু রাজ্যেই ভালো কাজ হয়েছে, যা কেন্দ্র দেশব্যাপী চালু করতে পারতো, কিন্তু করেনি। বক্তব্যের শেষে তিনি দুটি ছবির উল্লেখ করেন। প্রথম ছবিতে একজন প্রবীণ মহিলা বাজারে চক দিয়ে গোল্লা আঁকছেন। দ্বিতীয় ছবিতে এক প্রবীণ ভদ্রলোক ময়ূরের সাথে বসে আছেন। ছবি সত্যি হয়তো হাজার কথা বলে।
ক্রনোলজি বুঝুন
‘ক্রনোলজি বুঝুন’ – স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই উক্তি এখন এক বিখ্যাত শব্দবন্ধে পরিণত হয়েছে। ব্যাঙ্গাত্মক বার্তায় খুব ব্যবহার হয় এই কথাগুলো। আজ উচ্চারিত হল রাজ্যসভাতেও। করোনা নিয়ে আলোচনায় কেন্দ্রের ব্যর্থতার বর্ণনা করতে এই শব্দ ব্যবহার করেন তৃণমূলের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন। একদিকে যখন করোনা দেশে থাবা বসাচ্ছিল, সরকার ব্যস্ত ছিল ট্রাম্পকে স্বাগত জানাতে। রাজ্যগুলি যখন কোভিড মোকাবিলার জন্য তৈরি হচ্ছিল, কেন্দ্র বলছিল পরিস্থিতি গম্ভীর নয়, এইভাবেই কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন ডেরেক।
আক্রান্তের সংখ্যা ধামাচাপা
গুরুতর অভিযোগ উঠলো কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। ডিএমকে সাংসদ তিরুচি শিবা আজ রাজ্যসভায় বলেন বিশ্বের সামনে দেশের ভালো ছবি তুলে ধরতে ইচ্ছে করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ধামাচাপা দিচ্ছে সরকার। তার দাবি, লকডাউন দেরি করে শুরু করেছে কেন্দ্র, কারণ তাদের কাছে ট্রাম্পের ভারত সফর বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। করোনাকালে হিন্দি চাপানো নিয়েও সরব হন তিনি।
পরিযায়ী নয়
পরিযায়ী শ্রমিক – এই শব্দের ব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন জনতা দল ইউনাইটেড সাংসদ রামচন্দ্র প্রসাদ সিংহ। তার দাবি, এই কর্মীরাই ভিনরাজ্যে গিয়ে সেখানকার অর্থনীতিতে যোগদান করছেন। তাহলে কেন তাদের পরিযায়ী বলে অপমান করা হয়? তিনি আরও বলেন, পরিযায়ী শুধু শ্রমিকদের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। যা খুবই বিদ্বেষমূলক।
ভাওঁতার প্যাকেজ
অন্যান্য দেশ যখন করোনা মোকাবিলায় বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তখন ভাওঁতা দিয়েছে কেন্দ্র। এমনটাই বললেন কেরলের সিপিএম সাংসদ ই করিম। অন্য দেশে যেখানে জিডিপির ২০ % পর্যন্ত প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে, ভারত দিয়েছে মাত্র ১%, বাকি সব ব্যাঙ্ক লোন। এমনটাই বললেন সাংসদ।
নমস্তে জামাত
আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝা তাবলীগি জামাত এবং নমস্তে ট্রাম্প অনুষ্ঠান নিয়ে আক্রমণ করলেন কেন্দ্রকে। তার মতে, সামাজিক দূরত্ব শব্দটি খুব বিদ্বেষমূলক। এর ফলে সমাজে দূরত্ব তৈরি হয়, যা আমরা দেখেছি জামাতের (তাবলীগি জামাত) ক্ষেত্রে। অন্যদিকে নমস্তে ট্রাম্পের জমায়েতে যারা গেলেন, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কই?