রাজপথ সাজাতে ২০ হাজার কোটি! প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র
কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য অর্থ জোগাড় করতে সাংসদদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দিল্লির রাজপথ ঢেলে সাজাতে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে কেন, তা নিয়ে লোকসভায় প্রশ্নের মুখে পড়ল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
বিরোধী দল কংগ্রেস, এনসিপি থেকে তৃণমূল, এমনকি বিএসপি, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো বিজেপি-র ‘বন্ধু-স্থানীয়’ দলের সাংসদরাও দাবি তুলেছেন, সাংসদদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা ফের চালু হোক। এই তহবিলে প্রত্যেক সাংসদ তাঁর কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য বছরে ৫ কোটি টাকা করে পান। করোনা অতিমারির চেহারা নেওয়ায় মোদী সরকার গত এপ্রিলে দু’বছরের জন্য এই টাকা খরচ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে সাংসদদের বেতন এবং ভাতাও ৩০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
আজ লোকসভায় সাংসদদের বেতন, ভাতা ছাঁটাইয়ের বিল পাশ করানোর সময় সাংসদরা সকলেই তাঁদের বেতন কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। তৃণমূলের সৌগত রায় বলেন, ‘‘আমাদের দলের অবস্থান হল, আরও বেতন কমিয়ে দিন। ৩৫ শতাংশ বেতন কমান। কিন্তু সাংসদদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় তো স্থানীয় হাসপাতালের উন্নয়ন হচ্ছিল।’’
২০২০-২১ ও ২০২১-২২— দু’বছরে সাংসদদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা বন্ধ করে সরকারের সাশ্রয় হবে প্রায় ৭,৯০০ কোটি টাকা। বেতন ছাঁটাই করে সাশ্রয় হবে ৫৪ কোটি টাকা। সৌগতর প্রশ্ন, ‘‘এই রাজপথ, নতুন সংসদ ভবন তৈরির জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। এটাই কি সরকারের করোনা নিয়ে উদ্বেগের নমুনা? প্রধানমন্ত্রীর জন্য যে ভিভিআইপি বিমান আসছে, তার দাম কত? এ সব সংসদকে জানানো হোক।’’ এনসিপি-র সুপ্রিয়া সুলে বলেন, ‘‘সরকার নতুন দফতর, রাজপথ চায় নাকি হাসপাতাল, ভেন্টিলেটর? একদিকে, টাকা নেই বলে পেট্রল-ডিজেলে সেস বসিয়ে টাকা তোলা হচ্ছে। আরেক দিকে দিল্লির রাজপথ সাজাতে টাকা খরচ হচ্ছে। সরকারের অগ্রাধিকার কী?’’
সাংসদ এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকা বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে বিজেপি সাংসদরা কেন মুখ খুলছেন না, তা নিয়েও সৌগত প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর কাছে ৩০০-র বেশি সাংসদ রয়েছেন বলে সাংসদদের দাম নেই। যদি বিজেপিতে গণতন্ত্র থাকে তা হলে বিজেপি সাংসদরা এ নিয়ে বলুন।’’ সৌগতর সঙ্গে তৃণমূলের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্ররা অভিযোগ তোলেন, সরকার গত বছরের সাংসদ তহবিলের টাকাও আটকে রেখেছে।
এলাকা উন্নয়নের টাকা খরচের ক্ষেত্রে সাংসদদের তহবিলের ১৫ শতাংশ তফসিলি জাতি, ৭.৫ শতাংশ আদিবাসীদের জন্য খরচের পরামর্শ দেওয়া হয়। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘আমার লোকসভা কেন্দ্র অনগ্রসর এলাকা। সাংসদদের তহবিলের অধিকাংশ টাকাই তফসিলি জাতি, জনজাতি, গ্রামের মানুষের জন্য খরচ হয়। সকলে মিলে তাই প্রস্তাব নেওয়া হোক, এই টাকা চালু করার জন্য।’’ কিন্তু সরকার পক্ষ তাতে রাজি হয়নি। সংসদবিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী এ বিষয়ে কোনও উত্তরও দিতে চাননি।