পুলিসকর্তাদের নাম করে ফেসবুকে ভুয়ো প্রোফাইল, চাঞ্চল্য
বিধানসভা ভোটের আগে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র নয়। ফেসবুকে এরাজ্যের একাধিক আইপিএস অফিসারদের ভুয়ো প্রোফাইলের নেপথ্যে রয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতানোর ছক। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ওড়িশা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক সহ অনেক রাজ্যেই এই কারবার ফেঁদেছে সাইবার জালিয়াতরা। রীতিমতো চক্র গড়েই এই কাজ করছে তারা। প্রাথমিক তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে লালবাজারের হাতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালবাজারের এক সূত্র জানিয়েছে, এই চক্রের নেপথ্যে রয়েছে রাজস্থানের ভরতপুর একটি গ্যাং। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিসের টিম সেখানে পৌঁছে গিয়েছে বলে খবর।
কীভাবে চক্রের কথা জানতে পারলেন কলকাতা পুলিসের গোয়েন্দারা? লালবাজারের দাবি, ফেসবুকে যে ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস বা আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে এরাজ্যের আইপিএস অফিসারদের ভুয়ো প্রোফাইল বানানো হয়েছে, তা রাজস্থানের ভরতপুরের। পাশাপাশি, জালিয়াতদের খপ্পরে পড়ে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে এরাজ্যের যাঁরা প্রতারিত হয়েছেন, সেই অ্যাকাউন্টগুলিও রাজস্থানের বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। এরপরই সেই রাজ্যে গোয়েন্দাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় লালবাজার।
ভরতপুর গ্যাং কীভাবে জালিয়াতি করে? লালবাজারের গোয়েন্দারা বলছেন, পূর্ব ভারতে যেমন জামাতাড়া গ্যাং। ঠিক তেমনই রাজস্থানের ভরতপুর গ্যাং। তবে এই গ্যাংয়ের বৈশিষ্ট্য হল, এতদিন এদের জালিয়াতি পুরনো সামগ্রী বিক্রির একটি জনপ্রিয় অ্যাপেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু অতি সম্প্রতি তারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যের আইএএস, আইপিএস সহ পদস্থ পুলিস অফিসারদের নিশানা করেছে।
লালবাজার মনে করছে, একজন আইপিএস বা আইএএস অফিসারের নামে ভুয়ো প্রোফাইল খুলে টাকা চাইলে আমজনতা খুব সহজেই তা বিশ্বাস করবে। এতকাল ভরতপুর গ্যাংয়ের সদস্যরা অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তারাই এখন দেশজুড়ে শীর্ষ পুলিস কর্তা বা প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের নাম ভাঙিয়ে জালিয়াতি ও প্রতারণার কারবার চালাচ্ছে।
লালবাজার জানিয়েছে, কলকাতা পুলিসের এক এএসআইয়ের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি, কলকাতা পুলিসের অষ্টম ব্যাটালিয়নের ডিসি সুদীপ্ত নাগও লিখিত আকারে অভিযোগ জমা করেছেন। কলকাতা পুলিসের এলাকায় বড় অঙ্কের টাকা খোয়া না গেলেও লালবাজার কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
কলকাতা পুলিসের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন, ফেসবুকে সুরক্ষার ফাঁক রয়েছে। সেটাই কাজে লাগাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। ইতিমধ্যেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যাতে এই সুরক্ষা বাড়ানো হয়।
এদিকে, এই ধরনের অপরাধ রুখতে রাজ্যের সব পদস্থ পুলিস অফিসারকে ফেসবুকের প্রোফাইল চেক করতে নির্দেশ দিয়েছেন ডিআইজি সিআইডি । ভুয়ো প্রোফাইল থাকলে তার স্ক্রিন শট, ইউআরএল এবং ফেসবুক আইডি তাঁর দপ্তরে পাঠাতে বলেছেন তিনি।