খরিফ মরশুমে ধান উৎপাদনে দেশে সেরা পশ্চিমবঙ্গ
লকডাউন এবং কোভিড প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চলতি খরিফ মরশুমে রাজ্যে রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদনের আশা করছে রাজ্য। কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্টও বলছে, গত খরিফ মরশুমের তুলনায় অনেক বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে রাজ্যে। দীর্ঘ লকডাউন বা কোনও কোনও জায়গায় অতিবৃষ্টি ফলনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবার প্রায় ৪১ লক্ষ হেক্টর জমিতে খরিফের ধান চাষ হয়েছিল রাজ্যে। কেন্দ্রের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, গতবারের থেকে ৩.৪৮ লক্ষ হেক্টর বেশি জমিতে ধান চাষ হবে পশ্চিমবঙ্গে। আগের রিপোর্টে প্রায় ৪ লক্ষ হেক্টর বেশি জমিতে ধান চাষ হওয়ার কথা বলা হয়েছিল। তারপর অতিবৃষ্টির জেরে কিছু এলাকা জলমগ্ন হওয়ার কারণে জমির পরিমাণ কিছুটা কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যগুলির পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন রাজ্যের খরিফ ফসলের জমির পরিমাণ সম্পর্কিত রিপোর্ট তৈরি করে। তবে জমির পরিমাণ কিছুটা কমলেও এ বার ৪৪ লক্ষ হেক্টরের বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। খরিফ মরশুমে কৃষিদপ্তর প্রতিবারই ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা রাখে ৪৪ লক্ষ হেক্টর। কিন্তু নানা প্রতিকূলতায় অধিকাংশ সময় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায় না।
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যেপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁরা আশা করছেন এ বার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ধান চাষ হবে। ফলনও রেকর্ড পরিমাণ হবে। বড় ধরনের কোনও প্রাকৃতিক দু্র্যোগ না হলে এই লক্ষ্যে আমরা পৌঁছে যাব। সব জেলা থেকে গতবারের তুলনায় বেশি ধান চাষের খবর আসছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে রিপোর্টে যা বলা হচ্ছে, তার থেকে বেশি জমিতে ধান চাষ বাস্তবে হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। কারণ, সমীক্ষা এখনও চলছে।
এবার রাজ্যের প্রায় সব জেলাতেই নিয়মিত বৃষ্টি হয়েছে। দু’একটি ছাড়া সব জেলাতেই বর্ষণ স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যেই। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বৃষ্টির কিছুটা ঘাটতি থাকলেও তা ধানের ফলনে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না বলে মনে করছেন কৃষিদপ্তরের আধিকারিকরা। এই পরিস্থিতি ধান চাষের পক্ষে সহায়ক হয়েছে। বিশেষ করে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বীরভূম, বাঁকুড়া, বীরভূমের ‘শুখা’ এলাকার অনেক জমিতে বৃষ্টি ভালো হলে তবেই ধান চাষ করা সম্ভব হয়। কৃষিদপ্তরের রিপোর্ট বলছে, এবার পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলি ভালো বৃষ্টি পেয়েছে। সব জেলাতেই জুন থেকে শুধু স্বাভাবিক বৃষ্টি নয়, দীর্ঘকালীন সময়ের গড় বৃষ্টিপাতের থেকে বেশি বর্ষণ হয়েছে। ফলে পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে ধান চাষের জমির পরিমাণ বেড়েছে।
কৃষিমন্ত্রী অবশ্য মনে করেন, ভালো বৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষির উন্নয়নে যে সব ব্যবস্থা নিয়েছেন, তাও চাষের জমির পরিমাণ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। জল ধরো জল ভরো সহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে জমিতে সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ হয়েছে। কৃষকবন্ধু, বাংলা শস্যবিমা প্রকল্প চালু করায় চাষে উৎসাহ বাড়ছে। কৃষকবন্ধু প্রকল্পে বছরে দু’দফায় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পান চাষি। কোনও রকম খরচ ছাড়াই সরকার চাষিদের জন্য শস্যবিমা করায় অনেকেই ক্ষতির ঝুঁকির ভয় কাটিয়ে চাষ করেছেন।