ঘুরপথে বাড়ছে রেল ভাড়া, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা
করোনা সঙ্কটের মধ্যেই বাড়তে চলেছে ট্রেনের টিকিটের দাম। তাও ঘুরপথে। মোড়ক থাকবে স্টেশন আধুনিকীকরণের। আর লেভি চাপবে সাধারণ মানুষের উপর। টিকিটের বর্তমান দামের সঙ্গে অতিরিক্ত এই চার্জ যুক্ত হবে। অর্থাৎ নিঃশব্দে বেড়ে যাবে টিকিটমূল্য। ভাড়া বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছে রেল বোর্ড।
লোকাল কবে থেকে স্বাভাবিক হবে, এই মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। যতদিন না শহরতলির লাইফ লাইন স্বাভাবিক হচ্ছে, জীবন-জীবিকা ছন্দে ফেরার সম্ভাবনা ক্ষীণ। রেল চলাচল ফের শুরু হলেই যদি নতুন দাম ঘাড়ে চাপে, তা আম জনতার কাছে বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। এ প্রসঙ্গে রেল বোর্ডের এক কর্তা বলেন, ‘আগামী দিনে রেলে আন্তর্জাতিক মানের পরিষেবা নিশ্চিত করতে যাত্রীদের থেকে নামমাত্র লেভি বা টোকেন ইউজার ফি নেওয়া হবে। প্রথমে ব্যস্ততম স্টেশনগুলিতে এই চার্জ বসবে। অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পাঁচ-দশ বছর পর সংশ্লিষ্ট স্টেশনগুলি বর্ধিত যাত্রীর চাপ আর নিতে পারবে না। তাই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেই সব স্টেশনের সংস্কার ও আধুনিকীকরণ হবে।
দেশে এই মুহূর্তে প্রায় ৬৬ হাজার ৬০০ কিমি রেলপথ রয়েছে। ১৬টি জোনের মাধ্যমে এই দীর্ঘ রেলপথ পরিচালিত হয়। স্টেশন রয়েছে সব মিলিয়ে ৭ হাজার। রেল বোর্ডের ওই কর্তার দাবি, তার মধ্যে এক হাজার স্টেশনকে বাছাই করা হয়েছে।
বাংলার যাত্রীদের কাঁধে যে এই বাড়তি বোঝা চাপতে চলেছে, সে ব্যাপারে সংশয় নেই। কারণ, ভারতীয় রেলের ব্যস্ততম স্টেশনের তালিকায় প্রথম দু’টি স্থানই হাওড়া এবং শিয়ালদহের। তারপর রয়েছে মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস, কানপুর, চেন্নাই, বিজয়ওয়াড়া, পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় জংশন (মোগলসরাই), কল্যাণগড় প্রমুখ। অসামরিক বিমান পরিবহণে আগেই এই ইউজার ডেভেলপমেন্ট ফি (ইউডিএফ) চালু করা হয়েছে। বিমানবন্দরের উন্নয়নের জন্য যাত্রীদের থেকে এই অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়ে থাকে। এবার সেই পথেই হাঁটতে শুরু করল ভারতীয় রেল।
সূত্রের দাবি, লেভি বাবদ এই টাকা স্টেশনগুলির সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়নে খরচ করা হবে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ধীরে ধীরে স্টেশন আধুনিকীকরণের কাজ শেষ হলেও অতিরিক্ত এই ফি তুলে দেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট খাতের টাকা ভবিষ্যতে রেলের কনসেশন কিংবা ছাড়ের জন্য ব্যবহার করা হবে। রেল বোর্ডের ওই কর্তার কথায়, শীঘ্রই নির্দিষ্ট স্টেশনের জন্য অতিরিক্ত লেভি সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। গোটা বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছে রেল বোর্ড। এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রক ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক আমলাকে নিয়ে বিশেষ এক সচিব গোষ্ঠী তৈরি করেছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে এই অতিরিক্ত লেভি আদায় করা হবে। তিনি আরও বলেন, টিকিটের দামের সঙ্গে সামান্য কিছু খরচ যুক্ত হবে। তার বদলে যাত্রীরা আধুনিকতম পরিষেবার রেল স্টেশন পাবেন।