সক্রিয় ছত্রধর, লক্ষ্য ঝাড়গ্রামে চারটি বিধানসভা
জঙ্গলমহলে সক্রিয় হয়ে উঠছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ছত্রধর মাহাতো। ছত্রভঙ্গ সংগঠন মেরামতির কাজও তিনি ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে জঙ্গলমহলের আদিবাসী কুর্মি সমাজ তপশিলি উপজাতি তালিকাভুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করায় শাসক শিবিরে উদ্বেগ বেড়েছে। লোকসভা ভোটের আগেও এই আন্দোলনের জেরে কুর্মি সমাজের বড় অংশ তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলে তৃণমূল কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ঝাড়গ্রাম জেলার চারটি বিধানসভা দখলে রাখতে সক্রিয় হয়েছেন ছত্রধর। তিনি নিজের মতো করে সংগঠন তৈরির জন্য রাজ্য নেতৃত্বের কাছে বেশ কিছু প্রস্তাবও দিয়েছেন।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর বাঁকুড়া জেলার মটগোদা সহ ঝাড়গ্রামের লালগড়, জামবনি ও সাঁকরাইলে ছত্রধরের রাজনৈতিক কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই কর্মসূচির প্রতিটিতেই ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অথচ জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ছত্রধর মাহাতো লালগড়, ঝাড়গ্রাম সহ কয়েকটি এলাকায় অরাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সমস্ত কর্মসূচিতে হাতেগোনা কিছু মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় সৎপতির অভিযোগ, ছত্রধর তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর মানুষকে সেই এক দশক আগের কায়দায় ভয় দেখিয়ে কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। ছত্রধরকে দিয়ে শাসকদল পুনরায় সন্ত্রাসের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখলে রাখতে চাইছে।
পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে দলের একাংশ জনসাধারণের কমিটির প্রাক্তন নেতা ছত্রধরের উপর ভরসা রাখলেও তাঁর অতীত নিয়ে বিরোধীদের সরব হওয়ার বিষয়টিতে জেলার বেশিরভাগ তৃণমূল নেতাই অস্বস্তিতে পড়েছেন। তাঁরা মনে করছেন, ছত্রধরের এক দশক আগের কার্যকলাপই বিজেপি সহ অন্য বিরোধী দলের প্রচারের মূল হাতিয়ার হয়ে উঠছে। ফলে এই ইশ্যুতে বিরোধীদের প্রচারের সময় তাঁদের তা মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, আদিবাসীদের সংগঠন ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের মধ্যে রাজনীতি ঢুকিয়ে আদিবাসী সমাজকে বিভাজিত করারও অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এক্ষেত্রে সংগঠনের তরফে সমাজের নেতা রবিন টুডুর তৃণমূল ঘনিষ্ঠতার দিকে আঙুল তোলা হয়েছে।
অন্যদিকে, তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর ছত্রধরের কর্মসূচিতে লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের পাশাপাশি রাজ্যের গোয়েন্দারাও তাঁর ওপর নজর রাখতে শুরু করেছে। সোমবার লালগড়ের সিজুয়াতে ছত্রধরের একটি কর্মসূচি রয়েছে। তিনি ওই কর্মসূচির দায়িত্ব একাধিক মাওবাদী মামলায় অভিযুক্ত সন্তোষ পাত্রকে দিয়েছেন। ওই কর্মসূচিতে কিছু পুরোনো মাওবাদী সদস্যের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এ প্রসঙ্গে ছত্রধরের বক্তব্য, জঙ্গলমহলের মানুষ এখনও তাঁকে চাইছেন। এইজন্যই সর্বস্তরের লোকজন তাঁর ডাকে সাড়া দিচ্ছেন।