কৃষিবিলে বিপর্যস্ত হতে পারে রেশন ব্যবস্থা
কৃষি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে কেন্দ্রের মোদি সরকারের নতুন আইন দেশের রেশন ব্যবস্থাকেও বিপর্যস্ত করে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট মহল। চাষিদের কাছ থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে (এমএসপি) খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে তা রেশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় সরকারের এই খাদ্যশস্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হতে পারে বলে মনে করছে ওই মহল। তেমনটা হলেই রেশনে খাদ্য সরবরাহে সমস্যা হবে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার রেশনে খাদ্যশস্য দেওয়ার বদলে গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভর্তুকি খাতে দেয় অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা (ডিবিটি) চালু করার জন্য চাপ বাড়াতে পারে বলে রেশন ডিলারদের সংগঠন আশঙ্কা করছে। রাজ্যগুলিকে এই ব্যবস্থা চালু করার জন্য অনেক দিন থেকে কেন্দ্র বলছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ-সহ কোনও রাজ্য সরকার এতে রাজি হয়নি। কয়েকটি কেন্দ্রশাসিত এলাকায় রেশনের খাদ্যের বদলে ডিবিটি ইতিমধ্যে চালু হয়েছে।
অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু জানিয়েছেন, কেন্দ্রের ‘কালা ’ কৃষি আইনের জন্য রেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে। তাই ওই আইনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচি নিতে তাঁরা শীঘ্রই বৈঠকে বসবেন। কৃষি আইন নিয়ে হইচইয়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার গম-সহ বেশ কয়েকটি ফসলের এমএসপি ঘোষণা করে দিয়েছে। আগেই ধান-সহ কয়েকটি খরিফ ফসলেও এমএসপি ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রতি বছরের মধ্যে সব ফসলের এমএসপি কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি নতুন আইনে বেসরকারি বড় সংস্থাগুলি যাতে চাষিদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য সহজে কিনতে পারে তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বেসরকারি উদ্যোগীরা এমএসপি-র সমান বা তার কাছাকাছি দামে চাষির কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে ফসল কিনে নিতে পারে। এমন আশঙ্কাও থাকছে। বাড়িতে বসে নিজের ফসল বিক্রি করে ভালো দাম পেয়ে গেলে, চাষিরা কিষাণ মান্ডিতে গিয়ে সরকারের কাছে ফসল বিক্রির উৎসাহ হারাতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ কৃষি সমবায় সংস্থা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী প্রভৃতির মাধ্যমে গ্রামের মধ্যে গিয়ে ধান কেনার বিকল্প ব্যবস্থা রাজ্য সরকার করেছে। কিন্তু, অধিকাংশ রাজ্যে এরকম ব্যবস্থা নেই। সেখানে মান্ডিতে গিয়েই চাষিরা ফসল বিক্রি করেন।
রাজ্যে রাইস মিল মালিকদের সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুল মালেক জানিয়েছেন, চাষিরা যেখানে বেশি দাম পাবেন সেখানেই ধান বিক্রি করবেন এটা স্বাভাবিক। সাধারণত খোলাবাজারে ধানের দাম এমএসপি-র থেকে কম হয়। এবারের খরিফ মরশুমে কুইন্টালে ২০০-৩০০ টাকা কম ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে যখন খোলাবাজারের দাম এমএসপি-র থেকে বেশি বা প্রায় সমান হয়ে গিয়েছিল। সেইসময় সরকারি উদ্যোগে ধান কেনার গতি কমে যায়। কৃষিপণ্যের বেচাকেনায় বড় বেসরকারি উদ্যোগীরা এগিয়ে আসুক, কেন্দ্র এটা চাইছে বুঝতে পেরে বেশ কিছু সংস্থা ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে সক্রিয় হয়েছে। খাদ্যশস্য মজুত করার বড় গুদাম তৈরি শুরু করেছে তারা। পশ্চিমবঙ্গেও এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থা কলকাতার পাশের একটি জেলায় খাদ্যশস্য মজুত করার বড় গুদাম করছে। খাদ্যশস্য মজুত করার ব্যবস্থা বেসরকারি হাতে ছেড়ে দিতে পারলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচুর অর্থ বেঁচে যাবে।