‘মডার্ন ভিলেজ’ তৈরির পরিকল্পনা চেয়ে সব জেলাকে চিঠি নবান্নর
‘মডার্ন ভিলেজ’ তৈরিতে গোটা দেশের কাছে ‘আইকন’ হোক বাংলা। সেই লক্ষ্যে এবার উঠেপড়ে লাগল পঞ্চায়েত দপ্তর। পরিকল্পনা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রতিটি জেলা প্রশাসনের কাছে। আসলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার চাইছে, আগামী আর্থিক বছরে রাজ্যে যত বেশি সংখ্যক ‘মডার্ন ভিলেজ’ তৈরি করে দেশের সেরার সম্মান ছিনিয়ে আনা। ঠিক যেভাবে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে সাফল্য পেয়েছে রাজ্য।
আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ‘গ্রাম পঞ্চায়েত ডেভলপমেন্ট প্ল্যান (জিপিডিপি) চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। পঞ্চায়েতের পাশাপাশি এবার এই উন্নয়ন পরিকল্পনা জমা দিতে পারবে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতিও। সেই মতো ২০২১-২০২২ আর্থিক বছরে অর্থ বরাদ্দ করবে মোদি সরকার। ফলে ওই জিপিডিপি’র মধ্যেই আধুনিক গ্রাম তৈরির বিভিন্ন প্রকল্পকে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে পঞ্চায়েত দপ্তর। সোমবার নবান্নের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পের রূপরেখা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তার পরই সেটি কেন্দ্রের ই-গ্রাম স্বরাজ পোর্টালে আপলোড করা হবে।
কী ধরনের প্রকল্প ‘মডার্ন ভিলেজ’ তৈরির সহায়ক? জেলা প্রশাসনের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, পাকা রাস্তা, নিকাশিনালা, পরিস্রুত পানীয় জলের বন্দোবস্ত ছাড়াও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের উপর বেশি জোর দিতে হবে। গতানুগতিক উন্নয়ন ধারণার বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে। সে ক্ষেত্রে প্রায় ২০টি প্রকল্পের একটা তালিকা তৈরি করেছে পঞ্চায়েত দপ্তর। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—এক, চিলড্রেন পার্ক, ইকো-ট্যুরিজম পার্ক বা খেলার মাঠ তৈরির পরিকল্পনা। দুই, গ্রামের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পঞ্চায়েত অফিসে বেবি ফিডিং রুম বা কর্নার গড়ে তোলা। যেখানে মা’য়েরা তাঁদের শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পান করাতে পারেন। তিন, বৃষ্টির জল সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। চার, গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ। অর্থাৎ, নিকাশিনালার জল, টিউবওয়েল বা সাবমার্সিবলের বাড়তি জলকে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে ভূগর্ভে পাঠানো।
পাঁচ, কোয়ালিটি টেস্টিং ল্যাবরেটরি। ছয়, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এ ক্ষেত্রে রাস্তা নির্মাণে প্লাসটিক ব্যবহারের উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। সাত, সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কমিউনিটি বিদ্যুতায়ন। অর্থাৎ, গ্রামের রাস্তা, বাজার এলাকা, পঞ্চায়েত অফিসে সোলার লাইটের ব্যবস্থা করা। আট, পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন স্থানে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো। নয়, গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে নলবাহিত জল পৌঁছে দেওয়া। দশ, প্রতিটি পঞ্চায়েত অফিসে কিংবা বাজারে স্ত্রী ও পুরুষের জন্য পৃথক পৃথক শৌচাগার নির্মাণ। এ ছাড়াও গ্রামের স্কুলছুটের সংখ্যা কমাতে পঞ্চায়েতের নজরদারি বাড়ানো। অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র ও উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন। গ্রামের বিভিন্ন কর্নারে ওয়াটার এটিএম তৈরি। পঞ্চায়েত এলাকার প্রতিটি পরিবারের রোজগার সুনিশ্চিত করা সহ একাধিক প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
জেলাশাসকদের তত্ত্বাবধানে ‘মডার্ন ভিলেজ’-এর পরিকল্পনা তৈরি করবে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি। তবে জিপিডিপি’র রিপোর্ট বানানোর সময় পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে স্পষ্ট একটি গাইড লাইনও পঞ্চায়েতগুলিতে পাঠিয়ে দিয়েছে পঞ্চায়েত দপ্তর। ওই গাইড লাইনে যেমন বলা হয়েছে, নদী কিংবা খালের জলপ্রবাহ রোধ করতে পারে, এমন কোনও প্রকল্প নেতিবাচক কর্ম পরিকল্পনার মধ্যে পড়বে। আবার বনভূমি ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ বিরোধী কোনও প্রকল্প নেওয়া যাবে না।