জাত – অসুখটা গভীর, বুঝতে চায় না সমাজ
সমাজ কি দ্রুত পিছনের দিকে ছুটে চলেছে? আমাদের সংবিধান পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী, জাতির মানুষদের শিক্ষা, চাকরি ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংরক্ষণের সুযোগ দিয়েছে, যাতে তাঁরাও জীবনের মূলস্রোতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন। কিন্তু অবহেলা আজও অব্যাহত। আমরা ২০১৬ সালে দেখেছি দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার (ছবিতে) আত্মহত্যা। তাঁর ‘সুইসাইড নোট’ যেন তথাকথিত ‘ছোট জাত’-এর যন্ত্রণা ও অবিচারের জীবন্ত দলিল।
গত বছর মহারাষ্ট্রের এক মেডিক্যাল কলেজের দলিত ছাত্রী পায়েল তাড়ভি আত্মহত্যা করেন। পায়েলকে পদে পদে হেনস্থা করা হয়েছিল শুধুমাত্র তাঁর দলিত পরিচয়ের জন্য। মনে হয়, অধ্যাপিকা মেরুনা মুর্মু, রোহিত ভেমুলা, পায়েল তাড়ভিরা একই সরলরেখায় অবস্থান করছেন, যেখানে সমাজে তাঁদের পরিচয় কেবল এই যে, তাঁরা নিচু জাতের। তাঁদের শিক্ষা, মেধা, পরিশ্রমকে সংরক্ষণের তুলাদণ্ডে মাপার চেষ্টা করে গিয়েছি, আর তাঁদের রক্তাক্ত করেছি সুযোগ বুঝে।
জাতিবিদ্বেষের চোরাবালিতে কত মেধাবী দলিত তরুণের শ্বাসরোধ হয়ে যাচ্ছে, তার খবর আমাদের কাছে পৌঁছয় না। যাঁরা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে শিক্ষিকার নিগ্রহকারীকে সমর্থন করেছিলেন, তাঁরাও হয়তো স্বীকার করবেন এই জাতিবিদ্বেষ সংরক্ষণ ব্যবস্থার জন্য নয়, বরং জাতিবিদ্বেষের জন্যই এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা।
কয়েকদিন আগেই রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে দলিত-সাহিত্য অকাদেমি গঠন করা হবে। এর শীর্ষে থাকবেন বিশিষ্ট কলমচি মনোরঞ্জন ব্যাপারী। এরপরই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাঙ্গের এক ঢেউ বয়ে যায়। এমনকি বিশিষ্ট সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী দাবি তোলেন, এরপর তাহলে একটা ব্রাহ্মণ সাহিত্য অকাদেমি গঠন হোক। এবার সাহিত্যকাররাও বিপন্নতায় ভুগছেন?
তাহলে কি প্রকৃত অর্থেই সম্মিলিত প্রয়াস চলছে, নিম্ববর্গীয়দের পায়ের তলাতেই চেপে রাখার, যেন তেড়েফুঁড়ে উঠতে না পারে?