রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

জনপ্রতিনিধির বাড়ির লোক হলে চাকরি নয়, হুঁশিয়ারি ফিরহাদের

September 28, 2020 | 2 min read

স্বজনপোষণের সম্ভাবনা গোড়া থেকেই ছেঁটে ফেলতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি একেবারেই চান না, এ নিয়ে কোনও অভিযোগ আসুক। আর তাই সেই লক্ষ্যে এবার কোপ পড়ছে জনপ্রতিনিধিদের পরিবারে। রীতিমতো নিয়োগে অনুমোদনকারী সংস্থাকে দিয়েই এই ‘ছাঁকনি’র কাজ করাতে চাইছে রাজ্য সরকার। পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের পক্ষ থেকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের ১২৫টি পুরনিগম ও পুরসভার কোনওটিতেই এখন থেকে আর মেয়র, চেয়ারম্যান, পুর পরিষদের সদস্য বা কাউন্সিলারের আত্মীয়—কেউ চাকরি পাবেন না। বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে ডিরেক্টরেট অব লোকাল বডিজকে (ডিএলবি)।

শৃঙ্খলার প্রশ্নে সর্বদাই কঠোর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বজনপোষণের অভিযোগ প্রমাণ হলে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে এক শ্রেণীর জনপ্রতিনিধিরা এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বজনপোষণের অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছিল চুঁচুড়া পুরসভা। অভিযোগের সত্যতা সামনে আসায় গোটা প্যানেল বাতিল করে দিয়েছিল পুরদপ্তর। এই ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসে নবান্ন। গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ করতে একেবারে উপরতলা থেকেই সংস্কারের ব্যাপারে মনস্থির করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পুরসভা বা পুরনিগমে কোনও জনপ্রতিনিধির পরিবার, আত্মীয়স্বজন আর চাকরি পাবে না। যদি কারও নাম থেকে থাকে, সেই গোটা প্যানেল বাতিল করা হবে। মূলত এসব নিয়োগে অনুমোদন, নতুন পদ সৃষ্টি সহ কর্মী সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্বে থাকে ডিএলবি। তাদের স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও ক্ষেত্রেই রাজ্যের পুরসভাগুলিতে স্বজনপোষণ করা চলবে না। এতে দল ও সরকার— দু’য়েরই ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

ইতিমধ্যেই উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু পুরসভায় এই ধরনের নিয়োগ হয়েছে বলে নির্দিষ্টভাবে অভিযোগ এসেছে রাজ্য সরকারের কাছে। বিশেষ করে দুই ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলায়। এ ধরনের অভিযোগে ব্যাপক অসন্তুষ্ট নবান্নের শীর্ষ কর্তারা। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, জনপ্রতিনিধিদের আত্মীয়ের নাম থাকলে গোটা প্যানলেই বাতিল করা হবে। যা চুঁচুড়া পুরসভায় করা হয়েছে। আরও কয়েকটি পুরসভাতেও এ ধরনের ঘটনায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ গিয়েছে। ফলে অচিরেই এমন অভিযোগ বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা রাজ্য সরকারের। এ ব্যাপারে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ‘জনপ্রতিনিধির আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ করলে মানুষের মধ্যে খারাপ ধারণা তৈরি হয়। তাই সিলেকশন কমিটিতে যিনি থাকবেন, তাঁর আত্মীয়-পরিজন চাকরি পাবেন না। শুধু তাই নয়, মেয়র, চেয়ারম্যান বা কাউন্সিলারের বাড়ির লোকজন চাকরি পেলে বা প্যানেলে নাম থাকলে, তা বাতিল হয়ে যাবে। ডিএলবির শীর্ষ কর্তাকে তিনি এই নির্দেশ জানিয়ে দিয়েছেন।

আগামী বছর বিধানসভার ভোট। তার আগে সরকারের সিদ্ধান্তে খুশি হবে চাকরিপ্রার্থীরা। তৃণমূল সরকারের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। তবে আত্মীয়দের শ্রেণীবিভাগের বিষয়টিকে সঠিকভাবে ‘ফিল্টার’ করার কথা বলা হয়েছে। কারণ, কয়েকটি পুরসভার ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, শুধু কাউন্সিলারের ছেলে, ভাই, ভাইপো, পুত্রবধূই নন, দূরসম্পর্কের আত্মীয়ও চাকরি পেয়েছেন। সেদিকটিও খতিয়ে দেখা হবে বলে খবর। এমনকী, কিছু ক্ষেত্রে এও দেখা গিয়েছে যে, ভালো জায়গায় চাকরি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক কাউন্সিলার পদ ছেড়ে পুরসভার চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে বাদ গিয়েছেন সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের মধ্যে দলের কর্মীরাও রয়েছে। সেই বঞ্চিত কর্মীরাও অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। সেই সব অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতেই রাজ্য সরকারের এই নয়া সিদ্ধান্ত।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#firhad hakim, #jobs, #State Government

আরো দেখুন