রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

অমিতের পত্রাঘাতে ধরাশায়ী ধনখড়ের বাণিজ্য অভিযোগ 

September 29, 2020 | 3 min read

বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে এই সন্দেহে আগেই টুইটে সরব হয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবিও করেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপরেও উত্তর না আসায়, কিছুদিন আগেই তার ‘জবাবদিহি’ চেয়ে কার্যত নজিরবিহীন আক্রমণ করে  সরাসরি অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকে চিঠি লেখেন রাজ্যপাল। শুক্রবার এই চিঠির কথা নিজেই টুইটে জানান তিনি।

চিঠিতে রাজ্যপাল লেখেন, ‘২০১৬ থেকে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে কত টাকা বিনিয়োগ হয়েছে, কী কী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা জানতে চেয়ে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছিলাম ৫০ দিন আগে। কিন্তু এখনও তার উত্তর মেলেনি।’ একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলে টুইটে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কী আড়াল করছেন, কেনই বা? স্বচ্ছতা নেই কেন?’ এই গোটা বিষয়টি পুনরায় জানতে চেয়ে এদিন ফের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি তোলেন রাজ্যপাল।

এবার এই চিঠির চাঁচাছোলা ভাষায় জবাব দিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। চিঠিতে তিনি স্পষ্ট হিসেব দেন যে বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে কারা কারা যুক্ত ছিলেন, বাইরের  কোম্পানি বাংলায় কতো টাকা বিনিয়োগ করেছে,  সেই কাজ কতোটা এগিয়েছে,  এই সবের স্বচ্ছ উত্তর দিয়ে এক কথায় রাজ্যপালের মুখ বন্ধ করে দিলেন অর্থমন্ত্রী। 

অমিত মিত্র এদিনের চিঠিতে জানান,  ২০১১ সালে সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন বিপুল অংকের ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েও সরকার সমস্ত রকম দায়িত্বে উত্তীর্ণ হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই অর্থনীতির হাল ফিরিয়ে আনতেও সক্ষম হয় মমতা বন্দোপাধ্যায় সরকার। 

বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলন, বাংলার অর্থনীতিকেই গতি দেওয়া সরকারের সদিচ্ছা। ২০১৫ সাল থেকে শুরু হয় এই সম্মেলন এবং নজিরবিহীনভাবে প্রতিবছরই অনুষ্ঠিত হয়। আন্তর্জাতিক স্তরেও এই বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলন  প্রশংসা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও নীতিআয়োগে, রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। 

২০১৫ সালে যেখানে সম্মেলনে ২০০০ জন ডেলিগেট ছিলেন,  সেখানে ২০১৯- এ সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫০০- এ। রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিকাঠামো বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্যে নিউটাউনে পৃথিবীর সব থেকে বড় কনভোকেশন সেন্টারও তৈরি করা হয়। 

অর্থমন্ত্রী চিঠিতে এও জানান যে ২০১৫ সালে যতগুলো দেশ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিল, ২০১৯-এ সেই সংখ্যা দ্বিগুন হয়ে যায়। প্রায় ৩৫ টি দেশের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে যোগদান করেন। 

২০১৯- এর বাণিজ্য সম্মেলনে ১২ টি সহযোগী দেশ ছিল।  তারা হল জার্মানি, জাপান, ইউকে, ফ্রান্স, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, রিপাবলিক অফ কোরিয়া, পোল্যান্ড,  চেক রিপাবলিক, ফিনল্যান্ড, লেকজিমবার্গ, ইউএই। 

চিঠিতে তিনি আরো জানান যে ইউকে -র  তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও এই সম্মেলনে যোগ দি। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগেও এই বাণিজ্য সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। 

সরকারের এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন অরুন জেটলি, পীযূষ গোয়েল, নীতিন গড়করি,  সুরেশ প্রভুরাও। একথাও চিঠিতে লেখেন অমিত মিত্র। 

এছাড়াও যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সম্মেলনে যোগদান করেছেন, তাঁদের তালিকাও দেন। তাঁরা হলেন, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী তফিল আহমেদ, ইউকে -র তৎকালীন মন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। এছাড়াও যোগদান করেছেন পোল্যান্ডের মন্ত্রী, কোরিয়ার গভর্নর প্রমুখরা। 

এই সম্মেলনই প্রথম দুই রাজ্যের মধ্যে পার্টনারশিপের প্রস্তাব দেয়। যা আগে কখনো ঘটেনি। যার ফলে জার্মানির ২২% জিডিপির অধিকারী এক রাজ্য বাংলার সাথে পার্টনারশিপে সম্মত হয়। তারই ফলস্বরূপ গতকাল মুখ্যমন্ত্রী জার্মানির বিনিয়োগে ৯৬০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ঘোষণা করেন। এছাড়াও ইতালি, কোরিয়া, পোল্যান্ডের কিছু রাজ্য এই প্রস্তাবে  সম্মত হয়েছে বলে এদিনের চিঠিতে জানান অমিত মিত্র। 

এছাড়াও এই বাণিজ্য সম্মেলনে কারা কারা রাজ্যসরকারের পার্টনার ছিল,  বা কতো শতাংশ বাণিজ্য প্রতিশ্রুতি ফলপ্রসূ হয়েছে বা তার কতো শতাংশ কাজ ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে তারও বিশদ বিবরণ দেন অর্থমন্ত্রী এদিনের চিঠিতে।

আসুন সংক্ষেপে দেখে নিই, কি বলা আছে সেই চিঠিতে:——

● ২০১৫ সালে শুরু হওয়া বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে ২০০০ সম্মানীয় অতিথি থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ৪৫০০ অতিথি যোগদান করেছিল 

● ২০১৫ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে বি.জি.বি.এস-এর সঙ্গী রাষ্ট্রগুলির সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে 

● ভারতীয় বিশিষ্ট শিল্পপতিরা বি.জি.বি.এস-এ বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য রেখেছেন

● ভারতবর্ষে প্রথম বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে শুরু হয় “স্টেট টু স্টেট পার্টনারশিপস্”, যেখানে অন্যান্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ  রাজ্যগুলি বাংলার সঙ্গে সরাসরি বিভিন্ন প্রকল্পে লগ্নি করতে পারবে

● বি.জি.বি.এস ২০১৫ থেকে ২০১৮-র মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি লগ্নি প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়ে গেছে এবং ২০১৯-এর বি.জি.বি.এস-এর প্রস্তাবের ৭১,৬৪৬ কোটি টাকার লগ্নি রূপায়ণ করা হয়েছে

● এর ফলে ২৮ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে

● ২০১১-১২ থেকে ২০১৯-২০-র মধ্যে বাংলার জিডিপি প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি ঘটেছে

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Amit Mitra, #BGBS, #Jagdeep Dhankhar

আরো দেখুন