লন্ডন পাড়ি দিচ্ছে নবদ্বীপের ৭ ইঞ্চি দুর্গা
লকডাউন বদলে দিয়েছে অনেক কিছুই। বদলে গিয়েছে মৃৎশিল্পীদের কাজের ধারাও। তাই, শুধু কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণির শিল্পীরাই নন, এবার নবদ্বীপের এক বিখ্যাত মৃৎশিল্পী প্রভাত পালের তৈরি সাত ইঞ্চির দুর্গাপ্রতিমা পাড়ি দিতে চলেছে সুদূর লন্ডনে।
সাধারণত বড় প্রতিমাই বানিয়ে থাকেন নবদ্বীপের মৃৎশিল্পী প্রভাত পাল। প্রতিমা গড়ার জন্য তাঁর ডাক পড়ে অসম থেকে। দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে তাঁকে রথযাত্রার পরেই চলে যেতে হয় অসমে। অসমের বিখ্যাত চলচ্চিত্র তারকা বর্ষারানি বিষয়ার বাড়ির দুর্গাপ্রতিমা তিনি গড়েন। শুধু তাই নয়, অসমের বেশ কয়েকটি বারোয়ারি পুজো কমিটির প্রতিমা ধরে অন্তত আটটি দুর্গাপ্রতিমা তাঁকে গড়ে দিতে হয়। কালীপুজো শেষ করে নবদ্বীপের বিখ্যাত রাস উৎসব শুরুর আগে তিনি প্রতিবছর বাড়ি ফেরেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এবছর আর অসমে যাওয়া হয়ে ওঠেনি প্রভাতবাবুর। কিন্তু একজন শিল্পীর পক্ষে বসে থাকা কতদিনই বা সম্ভব। তাই, লকডাউনে বাড়িতে বসে সময় কাটছিল না তঁার। তিনি অন্যরকম ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। বড় প্রতিমার বদলে একাধিক ছোট মূর্তি তৈরি করা শুরু করেন। তা পোস্ট করতে থাকেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেখান থেকেই তাঁর সামনে খুলে যায় নতুন দরজা। লন্ডন থেকে দুর্গাপ্রতিমা তৈরির বরাত পেয়ে যান তিনি। তাঁর তৈরি সাত ইঞ্চির দুর্গাপ্রতিমা প্যাকেট বন্দি হয়ে পৌঁছে যাবে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডে।
কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ির ‘রাজরাজেশ্বরী’ দুর্গাপ্রতিমা তিনি ছোট আকারে তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। মুগ্ধ হয়ে সেই প্রতিমা কিনে নেন কলকাতার তমাল চক্রবর্তী নামে এক ব্যক্তি। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁর কাছে অর্ডার আসতে শুরু করে। সবটাই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে। কলকাতার বাসিন্দা তমাল চক্রবর্তীর দিদি রীতা চক্রবর্তী থাকেন লন্ডনে। ভাইয়ের কাছ থেকে শুনে তিনিও উৎসাহ দেখান ছোট দেবীদুর্গার মূর্তিতে। ভাইয়ের মাধ্যমে প্রভাত পালকে একটি সাত ইঞ্চির দুর্গামূর্তির অর্ডার দেন। ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসেছেন রীতা চক্রবর্তীর ছেলে সৌরভ চক্রবর্তী। তিনিই প্রভাত পালের তৈরি প্রতিমা নিয়ে যাবেন। প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী কানাই পালের ছেলে প্রভাত পাল। বিগত ৩৫ বছর ধরে প্রতিমা গড়ার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন তিনি। তাঁর আঙুলের ছোঁয়ায় তৈরি এক একটি প্রতিমা তাক লাগিয়ে দেয় দর্শনার্থীদের। আর সেই কারণেই প্রভাত পালের তৈরি দুর্গাপ্রতিমা এবার শুধু লন্ডনেই নয়, যাচ্ছে মুম্বই, কলকাতা, বৃন্দাবন-সহ অনেক জায়গাতেই।