রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

আর্থিক স্বচ্ছতার নিরিখে রাজ্যের ঢালাও প্রশংসা ক্যাগের

October 1, 2020 | 2 min read

আর্থিক স্বচ্ছতায় বাংলার ধারেকাছে নেই কোনও রাজ্য। কোনও সরকারি দাবি নয়, কেন্দ্রীয় সিলমোহর। আর এই স্বীকৃতি এল খোদ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়ার (ক্যাগ) থেকে। জমা ও খরচের নিখুঁত হিসেব দাখিলের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেছে ক্যাগ। সম্প্রতি সংস্থার অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল রাহুল কুমার রাজ্যের অর্থসচিবকে এই মর্মে একটি চিঠি দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘গত অর্থবর্ষের ১০০ শতাংশ জমা এবং ৯৯.৬২ শতাংশ খরচের হিসেব ইতিমধ্যেই পেশ করেছে নবান্ন। যা নিয়ে রাজ্য সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সিএজি।’ চিঠিতে রাহুল কুমার অর্থসচিবের কাছে ২০২০-২১ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের জমা-খরচের হিসেব পেশের আর্জি জানিয়েছেন। পাশাপাশি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে দেওয়া ঋণ এবং রাজ্য সরকারের বিবিধ বিনিয়োগের সবিস্তার বিবরণ চেয়েছেন। চিঠিতে ক্যাগের শীর্ষ কর্তা রাহুল কুমার আরও লিখেছেন, হিসেব পেশের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ধারাবাহিক সমন্বয়সাধন সত্যি প্রশংসনীয়। আমরা আরও খুশি, যাবতীয় দপ্তরের হিসেব নিরীক্ষণে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হওয়ায়। রাজ্য সরকারের প্রদেয় ঋণ এবং বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিবরণী পরীক্ষার জন্য লগ-ইন ব্যবস্থার সু্যোগ তৈরির আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সরকারি আয় ও ব্যয়ে স্বচ্ছতা আনতে ইন্টিগ্রেটেড ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেনট সিস্টেম (আইএমএফএস) চালু করা হয়েছে। এই অনলাইন ব্যবস্থার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে সিএজির জন্যও। যার ফলে কেন্দ্রীয় এই হিসেব নিরীক্ষক সংস্থাকে আগের মতো পশ্চিমবঙ্গের দপ্তরগুলিকে চিঠি দিয়ে হিসেব চাইতে হবে না। দরকার শুধু কম্পিউটারের একটা ক্লিক। তাতেই অর্থদপ্তরের যাবতীয় জমা-খরচ সহজে দেখতে পাবে ক্যাগ। অর্থদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, আইএমএফএস পদ্ধতিতে এই দু’টি বিষয়ও অনলাইনে দেখা যাবে। মনে হয়, কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার জেরে তা করা যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এই আধুনিক এবং স্বচ্ছ ব্যবস্থাকে গোটা দেশের মডেল বলেই মনে করছেন সিএজির কর্তারা।

রাজ্যের আর্থিক স্বচ্ছতা নিয়ে বিজেপি এবং গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ঠরা বেশ কয়েক মাস ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করছেন। এমনকী করোনা মোকাবিলা এবং উম-পুন পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়েও তাঁরা আক্রমণ করতে ছাড়েননি। সেই সব অভিযোগই যে ভিত্তিহীন, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ক্যাগের এই চিঠিতে। বিষয়টি নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে রীতিমতো উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ক্যাগের এই স্বীকৃতি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগকে খণ্ডন করল। রাজ্য সরকারের আর্থিক স্বচ্ছতা যে সংশয়ের অবকাশ রাখে না, তা এই চিঠিতে উঠে এসেছে বলেই মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন।

কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের আর্থিক জমা-খরচের অডিট করে ক্যাগ। প্রতি বছর সরকারকে নিয়ম করে তাদের আর্থিক জমা খরচের হিসেব দিতে হয়। হিসেবে গরমিল থাকলে ক্যাগ সঙ্গে সঙ্গে সেই অনিয়মের কথা তুলে ধরে। পরিবর্তনের জমানায় নবান্নের বিরুদ্ধে প্রতি বছরের হিসেব পেশ‌ না করার অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার বিভিন্ন সময়ে রাজ্য সরকারের টাকা খরচের অনিয়ম নিয়ে মুখর হয়েছেন। নবান্নের শীর্ষ মহলের বক্তব্য, ক্যাগের এই প্রশংসাসূচক লিখিত দলিল যাবতীয় অভিযোগকে কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ করে দিল। একের পর এক বিপর্যয় এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে ক্যাগের এই দরাজ সার্টিফিকেট নবান্নের আর্থিক শৃঙ্খলার দাবিকে আরও মজবুত করবে। পাশাপাশি সরকারি টাকা নয়-ছয় করা সংক্রান্ত বিরোধীদের যাবতীয় অভিযোগ ভোঁতা করে দেবে বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সব মিলিয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রশাসন চালানোর প্রতিশ্রুতি পালনে ১০০ শতাংশ সফল বাংলার প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Economy, #CAG

আরো দেখুন