হাথরসের পথে আটকে দেওয়া হল তৃণমূল সাংসদদের
আজ তৃণমূল কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল করোনা বিধি মেনে আলাদা আলাদা দিল্লী থেকে ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে হাথারস পৌঁছন নির্যাতিতার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে। এই দলে ছিলেন তৃণমূলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রতিমা মন্ডল এবং প্রাক্তন সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর। হাথরস থেকে ১.৫ কিলোমিটার দুরেই আটকে দেওয়া হয় এই দলকে। হাথরসের নির্যাতিতার পরিবারের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তাদের সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।
এক সাংসদ পুলিশ প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ, নিরস্ত্র এবং আলাদা আলাদাভাবে সমস্ত বিধি মেনে হাথরসের দিকে যাচ্ছিলাম নির্যাতিতার পরিবারের কাছে। আমাদের কেন আটকানো হল? এখানে কিরকম জঙ্গল রাজ চলছে যেখানে একজন নির্বাচিত সাংসদকে এক নির্যাতিত পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না? আমরা বাকি ১.৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে হাথরস যাবো।
ঐ চত্ত্বরে কোনও মহিলা পুলিশ ছিল না। এই অবস্থায় সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলকে পুরুষ পুলিশ গায়ে হাত দিলে সেটা ঠেকাতে ছুটে যান আরেক সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। তখন তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। বাদ দেওয়া হয়নি প্রতিমা মণ্ডলকেও। তাঁর ব্লাউজ ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। এবং এসব করেছে পুরুষ পুলিশকর্মী বলেই অভিযোগ।
দিল্লি থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে হাথরাস জেলায় ১৪ই সেপ্টেম্বরের এক দলিত পরিবারের মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে মাঠে ফসল কাটতে গিয়েছিলেন বছর কুড়ির দলিত যুবতী, মনীষা বাল্মীকি। কিছুক্ষণ বাদে ফসলের বোঝা মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরে যান নির্যাতিতার ভাই। তখনও মা-মেয়ে বাজরার ক্ষেতে ছিলেন। দুজন দু’প্রান্তে ফসল কাটছিলেন। হঠাৎ করে চার-পাঁচ জন দুষ্কৃতী আসে। তাঁর তরুণীর গলায় তাঁরই ওড়না পেঁচিয়ে দেয়। তারপর টেনে হিঁচড়ে তাঁকে সেখান থেকে নিয়ে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর মেয়েকে দেখতে না পেয়ে সন্ধান করা শুরু করেন মা। কিছুটা দূরে মেয়েটিকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। একাধিক হাড় ভাঙা, গোটা শরীরে ক্ষতচিহ্ন। ধর্ষণেরও প্রমাণ মিলেছে। নির্যাতিতার পরিবারের দাবি, তাঁকে ধর্ষণ করার পর বেধড়ক মারধর করা হয়। এরপর ২৯ তারিখ রাতে জীবনযুদ্ধে হার মানে ঐ কিশোরী।
এরপর মধ্যরাতে মেয়ের দেহ ঘিরে যখন বসে আছে শোকস্তব্ধ পরিবার, আচমকা পুলিশ এসে নিয়ে গেল সেই মেয়ের মৃতদেহ। আত্মীয়রা গাড়ি আটকালেও কোনও লাভ হল না।
হাসপাতালের বাইরে ধর্নায়ও বসেন তাঁরা। পরে সেখান থেকে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে হাথরসের উদ্দেশে রওনা দেয় পুলিশ।
দেহটি হাথরসে বাইরে পৌঁছতে নির্যাতিতার পরিবারের লোকজন, আত্মীয়রা পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত মেয়েকে দাহ করবেন না বলে জানিয়ে দেন তাঁরা। কিন্তু এরই মাঝে রুদ্রমূর্তি ধারণ করে পুলিশ। রাতেই দাহ করতে হবে বলে চাপ সৃষ্টি করে নির্যাতিতার পরিবারের উপর। নির্যাতিতার বাবা ও দাদার অভিযোগ, তাঁদের আপত্তি সত্বেও পুলিশ দেহ তুলে নিয়ে যায় ও পুড়িয়ে দেয়।
পুলিশকে পরিবারের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, হিন্দু রীতি মেনেই মেয়েকে দাহ করবেন, তবে রাতে নয়। এর পরেই পুলিশ তাঁদের উপর জোর খাটাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, নির্যাতিতার পরিবারকে এক পুলিশকর্মী বলছেন, ‘‘সময়ের সঙ্গে রীতি-নীতি বদলায়। তবে আপনারাও ভুল করেছেন। সেটা মেনে নিন।’’
বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইটারে লেখেন, “উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে দলিত তরুণীর উপর নৃশংস ও ন্যক্কারজনক ঘটনার নিন্দা করার মতো ভাষা নেই। পরিবারটির প্রতি সমবেদনা জানাই। কিছু মানুষ আছে যাঁরা, ভোটের জন্য মিথ্যা প্রতিশ্রুতি আর স্লোগান দেয়। পরিবারের অনুমতি ছাড়াই জোর করে তরুণীর দেহ সৎকারের ঘটনা তাদের স্বরূপ প্রকাশ্যে এনেছে।”