মন্দির মসজিদ গির্জা নিয়ে মমতা রাজনীতি করে নাঃ মুখ্যমন্ত্রী
হাথরসের ঘটনার নিন্দা এর আগেই করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট করে এই বিষয়ে তীব্র নিন্দা করেন। গতকাল তৃণমূল এক প্রতিনিধি দল পাঠান নির্যাতিতার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ও তাদের পাশে দাঁড়াতে। তাদের ঐ গ্রামের মাত্র এক কিলোমিটার দূর থেকেই গায়ের জোরে, মারধোর করে সরিয়ে দেয় উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। আজ ঐ নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার বিড়লা তারামণ্ডল থেকে গান্ধী মূর্তি পর্যন্ত পদযাত্রা করেন। তিনি বিজেপিকে সবথেকে বড় অতিমারিও বলেন।
তিনি সকলকে আহ্বান জানান, সোশ্যাল ডিস্টেন্স মেনে আমরা যেমন করোনাকে আটকাচ্ছি, গণতন্ত্র মেনে তেমন বিজেপিকেও পরাস্ত করার। সেখানে তিনি করোনার প্রসঙ্গে বলেন, করোনার ফলে অনেক পুলিশ কর্মী, ডাক্তার, আমাদের তিনজন বিধায়ক মারা গেছে। এখনও অনেকে অসুস্থ। দেশে কত লোক মারা গেছে, কেউ জানে না। আমি প্রতিদিন পথে নেমে কাজ করেছি। আমার বাড়িতে যে আমাকে কাজে সাহায্য করে, সেও কাল পজিটিভ হয়েছে। সাবধানতা নিয়েও এই রোগ আটকানো যাচ্ছে না। অতিমারির ভয়ে আমরা মিটিং মিছিল করছি না। বিজেপি একতরফা মিছিল করে দাঙ্গা লাগাচ্ছে, রোগ ছড়াচ্ছে। কোভিডকে লড়াই করে বেঁচে আছি, বিজেপির বন্দুককে ভয় পাই না।
উত্তরপ্রদেশের হাথরসের মর্মান্তিক ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মন কদিন থেকেই পড়ে আছে উত্তরপ্রদেশের নির্যাতিতার গ্রামে। কাল আমি ডেরেক ও’ব্রায়েন, প্রতিমা মণ্ডল, কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও মমতা ঠাকুরকে পাঠিয়েছিলাম। তাদের ১ কিলোমিটার আগে আটকে দেওয়া হয়, মহিলাদের পর্যন্ত ধরে মারা হয়। চারদিন আগে কেন মিডিয়াকে যেতে দিল না উত্তরপ্রদেশে নির্যাতিতার বাড়ি কাল থেকে সাংবাদিকদের ভয় দেখানো শুরু হচ্ছে এই ঘটনা নিয়ে বেশি কিছু না বলতে। কতদিন আটকাবেন? আমরা ঐ দলিতদের সঙ্গে দেখা করবোই একদিন। এখানে কিছু হলে সকলে চলে আসে ১৪৪ ধারা থাকলেও। দিল্লীর দাঙ্গায় কোন কমিশন গেল? এখানে মারপিট হলেও চারটে কমিশন চলে আসে, আমরা আটকাই না। কারণ বাংলার সংস্কৃতি আছে।
দেশের অন্ধকারকে দূর করতে দলিত, সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আজকের জন্য আমি দলিত, যেদিন যে অত্যাচারিত, আমি সেদিন তাই। কাল ব্লকে ব্লকে অল্প অল্প লোক নিয়ে পোস্টার মিছিল করুন। এর বিরুদ্ধে তৃণমূল কর্মীরা সমস্ত দলিত গ্রামে গিয়ে তাদের জানাবে কি হচ্ছে তাদের ওপর।
তিনি নিজের হাতে একটি টর্চ দেখিয়ে ও সেটি জ্বালিয়ে বলেন, যে দলিতের ওপর অত্যাচার হয়েছে, যাদের অন্ধকারে ঠেলা হচ্ছে, তাদের সামনে আনাই আমাদের লক্ষ্য, তাই আমার হাতে এই প্রতীকী টর্চ।
বিজেপির সারা দেশব্যাপী অত্যাচারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দিল্লীর দাঙ্গায়, সারা দেশে কত লোককে মেরেছে, কেউ বিচার পায়নি। যেখানেই অপরাধ হোক, আমরা নিন্দা করি। রাতের অন্ধকারে মৃতদেহ পুড়িয়ে দিল। এর আগে দিল্লীর দাঙ্গার পর মৃতদেহ জলে পড়ে ছিল। কেউ শনাক্ত হয়নি।
বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কিছু বললে ওরা বলে, মুসলমানদের তোষণ করি। আমার ধর্ম, মানবিকতা। তোমরা কে? সকলের পদবী নিয়ে বিচার করার? মুম্বাইতে কি নাটক হল এতদিন ধরে, আমরাও চাই অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু, সেটা ভোটের জন্য যেন না হয়। ভোটের আগে বাইরে থেকে খাবার এনে দলিতদের ঘরে খেয়ে বলে আমরা দলিতদের পাশে আছি। ভোট মিটে গেলেই তাদের ওপর অত্যাচার করে। এখানে বলেছে মমতা দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো করতে দেয় না, তাহলে যোগীজি কেন দুর্গাপুজো বন্ধ করলো? মন্দির মসজিদ গির্জা নিয়ে মমতা রাজনীতি করে না।
কৃষি বিলে যে কৃষকদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সেই নিয়ে তিনি বলেন, কৃষকদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, আলু নাকি অত্যাবশ্যক পণ্য নয়। সব বিজেপি একা খেয়ে নেবে। রাজ্যসভায় ভোট না করে জোর করে কৃষি বিল পাস করালো, দেশে দুর্ভিক্ষ আসছে। বিজেপি দেশের লজ্জা।
এই মুহূর্তে দেশে সব ক্ষেত্রে যে অরাজকতা তৈরি হয়েছে, সেটার বিরুদ্ধে একহাত নেন মমতা। তিনি বলেন, দেশে সুপার অটোক্রেসি চলছে, কোনও ডেমোক্রেসি নেই। এই সরকার মানুষের না, ডিক্টেটরশিপের, এজেন্সির। এরা শুধু, ভাষণ দেয় পাবলিসিটি করে আর ফেক নিউজ ছড়ায়। নেতা হবে গান্ধীজির মত যিনি শান্তির জন্য জীবন দিয়েছেন। এখন দেশের আইকন কোনও মনিষী নয়, বিজেপি নিজেকে আইকন বলে প্রতিপন্ন করছে। কত লোকের কাজ চলে গেছে, কারখানা বন্ধ। দোকানদার, ছোট শিল্প, শ্রমিক কাঁদছে। অতিমারিতে প্রয়োজনীয় কোনও কাজ না করে লকডাউন করে দিল।
জিএসটি বাবদ প্রাপ্য অনেকদিন ধরেই দিচ্ছে না কেন্দ্র। শুধু এই রাজ্য না, অবিজেপি শাসিত কোনও রাজ্যকেই প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। সেই নিয়ে তিনি বলেন, জিএসটির টাকা কেন দিচ্ছে না? কেন আমাকে ধার করতে হবে? ভোট এলে প্লেনে করে এজেন্সি দিয়ে টাকা পাঠায়। ভোট এলে, পুলওয়ামা, পাকিস্তান আসে, ভোট গেলে এয়ার ইন্ডিয়া, রেল বেচে দেয়। কিন্তু, রাজ্যের প্রাপ্য টাকা দেয় না।
সকলকে বরাভয় করতে তিনি বলেন, মানুষ হয়ে যখন জন্মেছি একদিন মারা যাবো, কিন্তু বিজেপির কাছে ভয় পাবো না। বিজেপি ভবিষ্যৎ না, অস্থায়ী। বিজেপির কালো কাজ কোনও কিছুতেই ঢাকবে না।