প্রয়াত শক্তি ঠাকুর
চলে গেলেন গায়ক-অভিনেতা শক্তি ঠাকুর। বড় মেয়ে মেহুলি গোস্বামী ঠাকুর সোশ্যাল মিডিয়ায় জানিয়েছেন, ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয় তাঁর। দীর্ঘদিন ধরেই শক্তিবাবু বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। সোমবার ভোরে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮।
একাধিক বাংলা সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপশি প্লেব্যাকও করেছিলেন শক্তি ঠাকুর। উৎপল দত্ত, বিকাশ রায়ের মতো স্বনামধন্য অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি। তাঁর ছোট মেয়ে মোনালি ঠাকুরও বাংলা ও হিন্দি গানের জগতে উজ্জ্বল নাম। তিনি করোনা পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছেন সুইৎজারল্যান্ডে।
বাবার মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন মেহুলি। ফেসবুক পেজে তাঁর ছাপ স্পষ্ট, ‘‘আমার বাবা…. আর নেই… নেই… ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট…..কয়েক ঘন্টার মধ্যেই চলে গেল…. আমার বাবা….. কিচ্ছু করতে পারলাম না……’’।
বাবার শেষকৃত্যর পরে তিনি জানান, ‘‘আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে বাবা মায়েরা একদিন চলে যায়…. জীবনে কোনোদিনও শ্মশানে আসিনি…. আজ সবই জীবনে প্রথম বার…… বাবা ছাড়া আজ থেকে নতুন জীবন…….. তুমি কি কোনোদিনও কোনো পাপ করোনি বাবা?….. নইলে এভাবে দু’ঘন্টার মধ্যে কে চলে যায়? “ধুর আর ভাল্লাগছেনা” বলে চলে গেলে…… সব কিছুতেই তাড়াহুড়োর জন্য কত বকাবকি করতাম…… আজ চলে যাওয়ার সময়ও এমন অদ্ভুত তাড়াহুড়ো কে করে বাবা?….. আমি তো তোমার কার্বন কপি…. আমিও তোমারি মত তাড়াহুড়ো করে চলে যাব দেখো……… কষ্টটা লিখে ফেলতে পারলে বোধহয় নিঃশ্বাস নিতে পারতাম……।’’
গায়ক, অভিনেতা হিসাবে পরিচয় পেলেও প্রথম জীবনে শক্তি ঠাকুর ছিলেন স্কুল শিক্ষক। অঙ্ক ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। ১৯৭৬-এ তপন সিংহের ‘হারমোনিয়াম’ ছবিতে নেপথ্য শিল্পী হিসেবে গানের দুনিয়ায় প্রথম পা রাখেন তিনি। তারপর আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় শক্তি ঠাকুরকে দিয়ে তাঁর সুর করা বেশ কিছু বাংলা ছবিতে গান গাইয়েছেন। পাশপাশি, তিনি অভিনয় করেছেন তরুণ মজুমদারের ‘দাদার কীর্তি’, ভালবাসা ভালবাসা ছবিতে। এই ছবিতে অভিনয়ের সঙ্গে কোরাসে গলাও মেলান। এ ছাড়াও শক্তি ঠাকুর গান গেয়েছেন, অজয় দাস, আর ডি বর্মনের সুরে।
সংগীত শিল্পী শিবাজি চট্টোপাধ্যায় আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “শেষের দিকে নিজেকে সকলের থেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন শিল্পী। তবে সংসার জীবনে দুই মেয়ের সাফল্য, বিশেষ করে মোনালির খ্যাতিতে তৃপ্ত ছিলেন শক্তি ঠাকুর।” এর আগেও তাঁর একবার স্ট্রোক হয়েছিল। তখন সামলে নিতে পারলেও এ বারে লড়াই ছেড়ে বিদায় নিলেন তিনি।