জিএসটি ক্ষতিপূরণের দাবিতে কেন্দ্র রাজ্যের সংঘাত চরমে
ক্ষতিপূরণ নিয়ে উত্তাল জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠক। রাজ্য কোনওভাবেই বাড়তি ঋণের বোঝা ঘাড়ে নেবে না। আর অনড় কেন্দ্রও।
করোনা ও লকডাউন ধাক্কা দিয়েছে দেশের অর্থনীতিতে। আর তাই জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটানোর দায় এবং দায়িত্ব কেন্দ্রেরই। সোমবার জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ সহ ১০টি রাজ্য এই অবস্থানই পুনরায় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিল কেন্দ্রকে। তাদের দাবি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে কেন্দ্র ঋণ করুক। রাজ্য পারবে না। অন্যদিকে, কেন্দ্রও অনড়। অর্থমন্ত্রক বৈঠকে বলেছে, কেন্দ্রের পক্ষে ঋণ নেওয়া সম্ভব নয়। টানা ৮ ঘণ্টার বৈঠকে মিলল না মীমাংসাসূত্র। যদিও রাজ্যগুলির প্রবল চাপ এবং ক্যাগের তীব্র সমালোচনার পর বকেয়া ইন্টিগ্রেটেড জিএসটির ২৪ হাজার কোটি টাকা আগামী সপ্তাহেই মিটিয়ে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নিজেই আজ এই ঘোষণা করেছেন। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, চলতি বছরের ক্ষতিপূরণ সেস বাবদ ২০ হাজার কোটি টাকা সোমবার রাজ্যগুলিকে প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা প্রাপ্য বকেয়ার সামান্যতম অংশ বললে ভুল হয় না। তাই এতে বরফ গলার সম্ভাবনা খুব একটা নেই। কিন্তু জিএসটি ক্ষতিপূরণ কীভাবে মেটানো হবে? এই প্রশ্নে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের ঘোরতর সংঘাত। অথচ সমাধান হল না এই সমস্যারই।
করোনা ও লকডাউনের কারণে রাজ্যগুলির যে পরিমাণ জিএসটি লোকসান হয়েছে, তার দায় এখনও নিতে নারাজ কেন্দ্র। সোমবার জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে তাই কেন্দ্র বনাম একঝাঁক রাজ্যের প্রবল টানাপোড়েন চলল। কিন্তু দিনভর এই ঝোড়ো আলোচনার পরও কোনও ঐকমত্য হল না। আবার ১২ অক্টোবর বৈঠক ডাকা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি দিয়েছিলেন, এদিনের বৈঠকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী ডঃ অমিত মিত্র সেই চিঠিটি পড়েন। তিনি বলেন, এটাই হওয়া উচিত আদর্শ বিকল্প। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার ঋণ করুক। তাঁকে সমর্থন করে অন্য বহু রাজ্য। এই ইস্যুতে বিজেপি বিরোধী রাজ্যগুলির পাশাপাশি এনডিএ সরকারের বন্ধু হিসেবে বিবেচিত দুই রাজ্য তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশও বিরোধীদের পাশেই ছিল। অর্থাৎ তারাও বলেছে, কেন্দ্রকেই ক্ষতিপৃরণ মেটাতে হবে।
সোমবারের বৈঠকে নতুন করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জিএসটি ক্ষতিপূরণ সেস পাঁচ বছরের সময়সীমা থেকে বাড়িয়ে দেওয়া হবে। ২০১৭ সালের জিএসটি আইন চালু হওয়ার সময় বলা হয়েছিল, যেহেতু কর আদায়ের অনেক অধিকার রাজ্যগুলি হাতছাড়া করছে, তাই পাঁচ বছর পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ সেস দেওয়া হবে। অর্থাৎ ২০২২ সাল পর্যন্ত। সোমবার সেই সিদ্ধান্ত বদলে নির্ধারিত ওই বছরের পরও ক্ষতিপূরণ সেস দিয়ে যেতে রাজি হয়েছে কেন্দ্র। আগামী ১২ অক্টোবর পুনরায় ক্ষতিপূরণ প্রদানের ফয়সালা হওয়ার বৈঠক ডাকা হলেও সেই বৈঠকে ভোটাভুটির সম্ভাবনা প্রবল। অর্থাৎ প্রশ্নটা পরিষ্কার—কেন্দ্র না রাজ্য, ক্ষতিপূরণের দায় কারা নেবে? এই ইস্যুতে জিএসটি কাউন্সিলে ভোটাভুটিও হতে পারে। আর সেক্ষেত্রে এখন যে রাজ্যগুলি কেন্দ্রের প্রস্তাবে রাজি হয়েছে, তারা ভোটাভুটির সময় রাজ্যের স্বার্থে বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলাতেই পারে। সোমবারের বৈঠকে কেরলের অর্থমন্ত্রী টমাস আইজ্যাক আগাম দাবি করে রেখেছেন, সোমবার ফয়সালা না হলে ভোটাভুটিই হোক!