রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

লকডাউনেও নজিরবিহীনভাবে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে রাজ্যে

October 7, 2020 | 2 min read

করোনা সংক্রমণের কারণে লকডাউনের পথে হেঁটেছে প্রায় গোটা বিশ্ব। আর তার জেরেই মন্দার ধাক্কা বাজারে। ব্যবসা মার খেয়েছে। লগ্নিও হয়নি সেভাবে। কিন্তু এই ঝিমিয়ে পড়া পরিস্থিতি রুখতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গের অগ্রগতি। নজিরবিহীনভাবে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে রাজ্যে। লকডাউনেই। চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসে রাজ্যে যে পরিমাণ বিদেশি লগ্নি এসেছে, তা তার আগের ছ’মাসের তুলনায় অনেকটা বেশি। রাজ্য সরকার নয়, পরিসংখ্যান দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্র নিজেই। যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে লগ্নির পরিবশে সৃষ্টি থেকে করোনা নিয়ন্ত্রণ—সব ক্ষেত্রেই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপণ করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
বাণিজ্য মন্ত্রক জানাচ্ছে, গত এপ্রিল থেকে জুনে এ রাজ্যে ১ হাজার ৯২৭ কোটি টাকার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। ২০১৯ সালে ওই একই সময়, সেই অঙ্ক ছিল ১ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা। গত অক্টোবর থেকে এবছরের মার্চ পর্যন্ত ছ’মাসে বিনিয়োগের অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। করোনা যখন বিশ্বের বাজারে থাবা বসায়নি। তখনও এ রাজ্যে বিদেশি বিনিয়োগ আসার পরিমাণ কম ছিল না। লকডাউনে তা আরও উজ্জ্বল হয়েছে। হিসেব বলছে, ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১ হাজার ৪০৯ কোটি টাকার। বছরভর চেষ্টা চালিয়ে সেবার যে বিনিয়োগ এসেছিল, এই আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসেই তাকে টেক্কা দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কেন্দ্র বলছে, এই সময়ের নিরিখে বিদেশি বিনিয়োগ আনার ক্ষেত্রে দেশে ন’নম্বরে রাজ্য। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও দিল্লি। শিল্পায়ন নিয়ে প্রায়শই বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় রাজ্য সরকারকে। বড় বিনিয়োগ না আসার খোঁচা তো রয়েছেই। কিন্তু কর্মসংস্থানের জন্য ছোট ও মাঝারি শিল্পের জুড়ি নেই, তা মানেন সব পক্ষ। রাজ্য সরকারও সেই ছোট শিল্পকে পাখির চোখ করেছে। শিল্পদপ্তরের কর্তারা বলছেন, এরাজ্যে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে সেই ছোট বা মাঝারি শিল্পের হাত ধরেই।
কিন্তু করোনা ও লকডাউনের মধ্যে ওই সাফল্য এল কী করে? শিল্পমহলের বক্তব্য, বিদেশি লগ্নি কখনও রাতারাতি আসে না। তার জন্য জমি তৈরি করতে হয়। যে প্রশাসনের ভাবমূর্তি যত ভালো, শিল্পায়নের নীতি যত আকর্ষণীয়, লগ্নির গা থেকে লাল ফিতের ফাঁস আলগা করার তৎপরতা যত বেশি, বিনিয়োগও সেখানে তত বেশি। বিশ্ব ব্যাঙ্কের উদ্যোগে যে ‘ইজ অব ডুইং বিজনেস’ প্রতিযোগিতা হয়, সেখানে গত কয়েক বছরে দফায় দফায় সামনের সারিতে এসেছে বাংলা। তা-ই বিনিয়োগ টানতে সুবিধা করে দিয়েছে। পাশাপাশি প্রতি বছর বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে হাজির থাকেন বিদেশি অতিথিরা। সেখান থেকে সরাসরি শিল্পায়নের বার্তা পৌঁছয় বিশ্বের নানা প্রান্তে। একটা শিল্প সম্মেলনেই কোটি কোটি টাকার লগ্নি চলে আসবে, এ ধারণা সঠিক নয় বলেই দাবি শিল্পমহলের। বারবার সম্মেলন করে শিল্পায়নের বার্তা জিইয়ে রাখাই বড় কথা। লাগাতার প্রচার দীর্ঘমেয়াদে লগ্নির ফসল ঘরে তুলতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রেও তেমনটাই হচ্ছে। আগামীদিনে তা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে সম্প্রতি করোনা নিয়ে চীন যেভাবে বিশ্বজুড়ে কোণঠাসা, তার সদর্থক প্রভাব ভারতে পড়তে বাধ্য। রাজ্যও তার সুবিধা পাবে, আশা করছে শিল্পমহল। 

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Foreign investment, #Bengal, #covid19

আরো দেখুন