দুর্গার মুখবন্ধনী তৈরিতে ব্যস্ত বনকাপাশির শিল্পীরা
শিউলি ফুল ও কাশের দোলায় বাঙালির মনে এখন আগমনীর সুর। কয়েকদিন পরেই শ্রেষ্ঠ উৎসবে মাতবে বাঙালি। তবে করোনা আবহে কিছুটা হলেও পুজোর আনন্দে ভাটা পড়েছে। এবার নতুন জামাকাপড়ের সঙ্গে মাস্কে মুখ ঢেকেই মণ্ডপে যেতে হবে দর্শনার্থীদের। তাই পুজোর ফ্যাশনের জন্য বিভিন্ন ধরনের পোশাকের সঙ্গে ম্যাচিং মাস্ক কেনাকাটাও শুরু হয়েছে। তবে শুধু দর্শনার্থী নয়, মা দুর্গার মুখেও মাস্ক পরাতে চাইছেন বহু পুজো উদ্যোক্তা। সে কথা মাথায় রেখে এবার দুর্গাপ্রতিমার শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং করে শোলার মাস্ক তৈরি করছেন মঙ্গলকোটের বনকাপাশির শোলাশিল্পীরা। তাতে রয়েছে এন-৯৫ লেখা শোলার মাস্কও।
পুজোর আর কয়েকটা দিন বাকি রয়েছে। তাই রাত জেগে প্রতিমার সাজের সঙ্গে শোলার মাস্ক তৈরি করছেন শিল্পীরা। লক্ষ্মী, গণেশ, সরস্বতী থেকে শুরু করে অসুরের মুখের জন্যও মাস্ক তৈরি হচ্ছে। শোলার মাস্কে অভিনবত্ব এনেছেন তাঁরা। জরির সাজের সঙ্গে জরির মাস্কও আছে। আবার এন ৯৫ লেখা মাস্কও তৈরি করা হয়েছে। করোনা সচেতনতার বার্তা দিতেই তাঁদের এমন ভাবনা বলে শিল্পীদের দাবি। তারসঙ্গে পুজো উদ্যেক্তাদের চাহিদা মতো শোলার সাজের মাস্ক তৈরি করা হয়েছে।
বনকাপাশি গ্রামের শোলা শিল্পী বরুণ মালাকার, অরুণ মালাকার বলেন, প্রতিবছর আমরা দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মুম্বই সহ বিভিন্ন রাজ্যে ডাক পাই। সেখানকার দুর্গা মণ্ডপ শোলার সাজ দিয়ে সাজিয়ে তুলি। কিন্তু এবছর বিভিন্ন জায়গার লক্ষ লক্ষ টাকার বরাত বাতিল হয়ে গিয়েছে। তাই এবার স্থানীয় পুজো মণ্ডপগুলিতেই শোলার সাজের বরাত পেয়েছি। করোনা সচেতনতার জন্য অনেকেই বিভিন্ন রকম ভাবনা এনেছেন। আমরাও প্রতিমার সাজের জন্য শোলার মাস্ক তৈরি করেছি। বোলপুরের একটি মণ্ডপে প্রতিমার মাস্কের জন্য বরাত পেয়েছি। তাই প্রতিমার বিভিন্ন রঙের সাজের সঙ্গে ম্যাচিং করে মাস্ক তৈরি করছি। মঙ্গলকোটের বনকাপাশি গ্রাম শোলাশিল্পের জন্য দেশজুড়ে বিখ্যাত। গ্রামে ১৯৯০ সাল থেকে শোলাশিল্পের জন্য প্রচুর পুরস্কার এনেছেন শিল্পীরা। ইতিমধ্যেই বর্তমান রাজ্য সরকার বনকাপাশি গ্রামে শোলাহাব গড়েছে। প্রায় ৫০০ শিল্পী এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তবে এবার করোনার জন্য গোটা শিল্পই থমকে আছে। ভিন রাজ্যের বদলে স্থানীয় পুজো মণ্ডপগুলিই একমাত্র তাঁদের ভরসা। পারিশ্রমিক অল্প হলেও ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এখন রাতদিন জেগে কাজ করছেন তাঁরা। এক শিল্পী বলেন, এবার গাজিয়াবাদে দুর্গা পুজোর জন্য প্রায় ১৪ লক্ষ টাকার চারটি প্যান্ডেল বাতিল হয়েছে। কলকাতার প্রায় ৪২টি দুর্গা প্রতিমার দু’ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার শোলার সাজের বরাত বাতিল হয়েছে। শ্রমিকদের এখনও পর্যন্ত পুজোর জন্য মজুরি বাবদ কিছু টাকা আগাম মিটিয়ে রেখেছি। আর ঋণ নিয়ে প্রতিমা সাজানোর জন্য শোলার সাজ তৈরি করে রেখেছি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের জেরে সবকিছু পণ্ড হয়ে গেল।