ভার্চুয়াল মাধ্যমে পুজোয় জোর, সেরার দৌড়ে উদ্যোক্তারা
পুজোর সফল উদ্যোক্তা কারা? যাঁর মণ্ডপে যত বেশি ভিড় তাঁরাই সফল উদ্যোক্তা। রাত বাড়ছে। ভিড় বাড়ছে। রাত দেড়টা। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের স্কোর চোখ ধাঁধানো। দর্শক সংখ্যা তিন লক্ষ ছাপিয়ে গিয়েছে। তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে বাদামতলা। এগিয়ে কলেজ স্কোয়ার। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টিভিতে ‘লাইভ টেলিকাস্ট’। পুজো পরিক্রমা। ইজি চেয়ার দোলাতে দোলাতে বাড়ির কর্তার মন্তব্য—‘বুঝলে, এবার কিন্তু ভিড় টানার দৌড়ে সোনার দুর্গাই ফার্স্ট!’ অর্থাৎ তাঁর কাছে সফল সন্তোষ মিত্রের পুজো উদ্যোক্তারা। সাফল্যের মাপকাঠি দর্শক সমাগম।
আজ বলে আজ নয়। কলকাতার পুজোয় এটাই ট্রেন্ড। থিমের চমকে ভিড় টেনেই বড়ো হয়েছে শহরের একাধিক পুজো। কোভিডের দাপটে সবই উলট-পুরাণ। এবার ভিড় টেনে নয়, বরং ভিড় কমিয়ে সেরার শিরোপা পেতে চাইছেন পুজো উদ্যোক্তারা। আর সেই প্রতিযোগিতায় নামতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া, ভার্চুয়াল মাধ্যম, এলইডি টিভি লাগানো ভ্রাম্যমাণ গাড়ি ব্যবহারে ঝুঁকছেন তাঁরা। মোদ্দা কথা হল, ভিড় কমিয়ে কে কত বেশি প্যাণ্ডেল, প্রতিমাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারে, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। অন্তত দুগ্গা…দুগ্গা…বলে তো পেরিয়ে যাক ‘অভিশপ্ত’ ২০২০। একুশে না হয় নতুন উদ্যোমে ভিড়-প্রতিযোগিতায় নামা যাবে! শহরের প্রায় প্রতিটি পুজো কমিটি, ক্লাবের এটাই ইচ্ছে। ধরা যাক, যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লির কথা। শহরের প্রথম সারির পুজো উদ্যোক্তা। সশরীরে মণ্ডপ, প্রতিমা দর্শনে তেমন কোনও বাধা থাকছে না এখানে। তবে থাকছে স্বাস্থ্যবিধির কড়া শাসন। ভিড় কমাতে পাড়ায় পাড়ায় ভ্রাম্যমাণ গড়িতে ভার্চুয়াল প্রতিমা দর্শনের ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা। পুজো কমিটির কর্মকর্তা তথা কলকাতা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য রতন দে’র কথায়, ‘প্রতিমা দর্শনে কেউ আসতে চাইলে তো বাধা দিতে পারি না। তবে, যতটা সম্ভব ভিড় এড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। এর জন্য বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ এলইডি টিভি লাগানো গাড়ি কেনা হচ্ছে। সেই টিভিতে দেখানো হবে পুজোর খুঁটিনাটি। সকাল থেকে বিকেল। শহরজুড়ে ঘুরবে গাড়ি। ফলে মণ্ডপে না আসলেও চিন্তা নেই। বাড়িতে বসেই দেখা যাবে পুজো।’
ভিড় নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দিচ্ছে উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেন পুজো কমিটিও। মণ্ডপে প্রবেশ-প্রস্থানে থাকছে একটিই পথ। নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে মণ্ডপে ঢুকবেন দর্শকরা। ছবি তোলার সুযোগ নাও মিলতে পারে। থাকবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। ঘরে বসে প্যান্ডেল, প্রতিমা দর্শনেরও ব্যবস্থা থাকছে। ক্লাবের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজে লাইভ পুজো দেখতে পারবেন দর্শকরা। কলাবউ স্নান, সন্ধিপুজো, সন্ধ্যা আরতি অথবা দশমীর বরণ—সবই দেখা যাবে। পুজো কমিটির তরফে সোমেন দত্ত বলেন, ‘আগে থেকেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে দিয়ে দেওয়া হবে প্রত্যেকটি লিংক। সেই লিংকের মাধ্যমে মণ্ডপ থেকে প্রতিমা দর্শন করা যাবে এক ক্লিকেই। থাকছে ইউটিউব চ্যানেলে।’ বেলেঘাটা ৩৩ পল্লিও এবার আর ভিড় টানার প্রতিযোগিতায় নেই। জোর দেওয়া হচ্ছে ভার্চুয়ালে। তা সত্ত্বেও যাঁরা আসবেন তাঁদের জন্য থাকবে দূরত্ববিধি মেনে চলার কড়া শাসন। মন্ডপে ঢোকা এবং বেরোনো পথে বসবে স্যানিটাইজার গেট।
পুজো কমিটির তরফে সুশান্ত সাহা বলেন, ‘মণ্ডপে দর্শনার্থীদের আসা বন্ধ করা সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা আসতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই অনলাইনে পুজো দেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আগে জীবন, পরে উৎসব-যাপন।’