দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

আবাসন থেকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত রেলের, রুখতে মরিয়া তৃণমূল

October 9, 2020 | 2 min read

বনগাঁয় রেলের আবাসনে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে সম্প্রতি নোটিস দিয়ে উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, ওই আবাসনগুলি দীর্ঘ দিন ধরে জবরদখলে রেখেছে কিছু পরিবার। এই নির্দেশ পেয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট পরিবারের লোকজন। তাঁদের বক্তব্য, বহু বছর ধরে বসবাস করছেন। অনেকের জন্ম হয়েছে এই রেল আবাসনে। হঠাৎ করে তাঁদের পক্ষে অন্যত্র চলে যাওয়া সম্ভব নয়। পরিবারগুলির দাবি, তাঁরা বিদ্যুতের বিল দেন। পুরসভায় কর দেন। বেশিরভাগ পরিবারের কেউ না কেউ অতীতে রেলে চাকরি করেছেন। সেই সূত্রে তাঁরা রেলের আবাসনে থাকতে শুরু করেছিলেন।

পরিবারগুলির পক্ষ নিয়ে ইতিমধ্যে আন্দোলন শুরু করেছে তৃণমূল। নোটিস পাওয়া পরিবারগুলির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করেছেন তৃণমূল নেতারা। তৈরি করা হয়েছে ‘বনগাঁ রেল কোয়ার্টার কলোনি উচ্ছেদ কমিটি।’ কমিটির সভাপতি হয়েছেন তৃণমূল নেতা তথা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য শম্ভু দাস। ইতিমধ্যেই কমিটির পক্ষ থেকে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। মিছিল হয়েছে। শম্ভু বলেন, ‘‘রেল কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রেল আবাসনে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ করা যাবে না। উচ্ছেদ করতে হলে আগে পুনর্বাসন দিতে হবে। জমি-বাড়ি করে দিতে হবে। আমাদের দাবি মানা না হলে আন্দোলন চলবে।’’ কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বনগাঁ শহরের ঢাকাপাড়া, সাহাপাড়া, বাবুপাড়া, আরএস মাঠ এলাকায় রেল আবাসনগুলি আছে। সেখানে প্রায় ১০০টি পরিবার বসবাস করে। কেউ ২৫ বছর, কেউ ৩০ বছর ধরে আছেন। 

রেলের নোটিসে বলা হয়েছিল, ৬ অক্টোবরের মধ্যে আবাসনগুলি খালি করতে হবে। না হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। ৫ অক্টোবর কমিটির পক্ষ থেকে রেলের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হলেও রেলের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া মেলেনি। তবে ৬ তারিখ পেরিয়ে গেলেও কোনও ব্যবস্থাও নেয়নি রেল।

বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের কথায়, ‘‘রেল আবাসনে থাকা পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মতামত নিয়ে রেলের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটাতে পদক্ষেপ করব।’’ রেল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।  

এ দিকে, রেলের ভূমিকার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার শহরের নিউ বাটারমোড় এলাকায় উচ্ছেদ বিরোধী কমিটি এবং বনগাঁ শহর তৃণমূলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ সভা, অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। সেখানে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি আবাসনে বসবাসকারী মানুষজনও ছিলেন। তাঁদেরই একজন সুমি সাহা বলেন, ‘‘প্রায় ২১ বছর ধরে আমরা রেল আবাসনে বসবাস করছি। স্বামী হকারি করেন। লকডাউনে রুজিরোজগার বন্ধ। এখন উচ্ছেদ হলে পথে বসতে হবে। পুনর্বাসন ছাড়া আমরা আবাসন ছাড়ব না।’’

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিধানসভা ভোটের আগে উচ্ছেদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে তৃণমূল নেতৃত্ব কেন্দ্র তথা বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনের সুযোগ পেয়েছে। রেলের নোটিস ঘিরে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। সিপিএমের প্রাক্তন কাউন্সিলর পার্থ সাহা আবার তৃণমূলের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতার অভিযোগ এনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আরএস মাঠ এলাকায় ইন্ডোর স্টেডিয়ামের ঘোষণা করেছিলেন। তখন রেল আবাসনে থাকা পরিবারগুলিকে উচ্ছেদের পক্ষে ছিল তৃণমূল। এখন বিরোধিতা করছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, রেল তাদের জমি, আবাসন নিক। তবে পরিবারগুলিকে আগে পুনর্বাসন দিতে হবে।’’ বনগাঁ শহর যুব তৃণমূল সভাপতি প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘ইন্ডোর স্টেডিয়াম ঘোষণার পরে আমরা বলেছিলাম, পুনর্বাসন ছাড়া কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না। রাজনীতিতে দেউলিয়া সিপিএমের স্মৃতিভ্রম হয়েছে।’’          

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Rail Quarter, #tmc, #bangaon

আরো দেখুন