২০৩০ সালে বছরে ২.৫ কোটি মৃত্যু হতে পারে হার্ট অ্যাটাকে
করোনার ভয়ে বেশ কয়েকমাস ধরেই অন্যান্য অসুখ নিয়ে অনেকেই অবহেলা করেছেন, ফলে আচমকা হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বিশেষজ্ঞরা সমীক্ষায় জেনেছেন, ২০৩০ সালে বছরে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে অকালে মৃত্যু হতে পারে। এঁদের বেশিরভাগ ভারতীয়।
‘ল্যান্সেট’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে আমাদের দেশে ২১ লক্ষ মানুষ হার্ট অ্যাটাকে প্রাণ হারিয়েছে। অথচ হার্টের অসুখের যাবতীয় চিকিৎসা এখন বিজ্ঞানীদের হাতের মুঠোয়। কিন্তু তার জন্যে সঠিক সময়ে চিকিৎসকদের কাছে পৌঁছতে হবে, জানালেন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিয়োলজিস্ট।
পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশে হার্টের রোগের প্রবণতা বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবিটিস, অতিরিক্ত ওজনের বোঝা। তবে জীবনযাত্রার কারণে হার্টের অসুখ কার্ডিয়োভাসকিউলার ডিজিজে ভুগছে বিশ্বের নানা দেশের মানুষ।
হার্ট ভাল রাখতে ছোট থেকেই সচেতন হতে হবে। এখন বাচ্চাদের মধ্যে ছোটাছুটি করে খেলার ইচ্ছে কম, কোভিড পরিস্থিতিতে গৃহবন্দী থাকায় বাচ্চাদের ওজন আরও বাড়ছে। দিনভর টেলিভিশন বা কম্পিউটারের সামনে বসে চিপস-স্ন্যাক্সে ওজন বাড়ছে।
ছোট থেকেই ডায়াবিটিস ও হার্টের অসুখের ঝুঁকি তৈরি হয়। কার্ডিয়োলজিকাল সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশ জুড়ে এক সমীক্ষা করে দেখেছেন, কলকাতা সহ ছোট বড় শহরের (দার্জিলিং বাদে) বাচ্চারা গাড়ি বা বাসে চড়ে স্কুল যাওয়া আসা করে, টিউশন পড়তে যায়, দিন রাত হোমওয়ার্ক, আঁকা নিয়ে ব্যস্ত। এঁদের প্রিয় খাবার পিৎজা, চাউমিন, রোল-সহ নানা ভাজা ও চটজলদি খাবার। হাই ক্যালোরি ও পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট খাওয়া ও ছোটাছুটি না করায় ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। এখানেই লুকিয়ে আছে হার্টের অসুখের বাড়বাড়ন্তের প্রধান সূত্র।
কার্ডিয়োলজিস্টদের কথায়, ‘‘শৈশবেই বাচ্চাদের স্বাস্থ্য সচেতন করতে পারলে আগামী দিনে হার্টের অসুখের বাড়বাড়ন্ত অনেকাংশে আটকে দেওয়া যাবে।’’ হার্টের অসুখ প্রতিরোধে কিছু নিয়ম মেনে চলার নিদান দিলেন তিনি।
সেগুলি হল:
১ . দূরে রাখুন সিগারেটকে।
২ . বেশি নুন হার্টের সুস্বাস্থ্য বিঘ্নিত করে। দিনে ২.৫ গ্রামের বেশি নুন খাবেন না।
৩ . চিনি ও কৃত্রিম মিষ্টি খাবেন না। পরিবর্তে টাটকা ফল, মাছ ও চিকেন খান। অবশ্যই পর্যাপ্ত জল পান করতে হবে। এলপিজি-র যত্ন নিন। এল মানে লিপিড, পি- প্রেশার আর জি– গ্লুকোজ। এই সব নিয়ন্ত্রণে না রাখলেই বিপদ।
৪ . ফাস্ট ফুড, সংরক্ষিত খাবারের বদলে টাটকা শাক সব্জি, ডাল, গম, চাল, ওটস খেতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণে। মাছ ও চিকেন জাতীয় মাংস, অল্প তেলে রান্না করে খেতে হবে।
৫ . সপ্তাহে ৫ দিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করতেই হবে।
ডায়াবিটিস ও হাই ব্লাড প্রেশার হার্টের অসুখের বড় শত্রু। তাই দুটি বিষয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যাঁদের পরিবারে আচমকা হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা ঘটেছে, তাঁদের বাড়তি সাবধানতা দরকার। কোনও সমস্যা হোক বা না হোক, নিয়ম করে বছরে দুবার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। আর বুকে অস্বস্তি বা চাপ ধরা ভাব শুরু হলে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস ভেবে ফেলে রাখলে ভয়ানক বিপদে পড়বেন। কোনওরকম অস্বস্তি হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।