মাস্কের আড়ালে খোলা ঠোঁট, লিপস্টিক আর …
করোনার সময় মাস্ক যে এখন নিত্যসঙ্গী সে বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই। পরিসংখ্যান বলছে কোভিড সংক্রমণের হার যেমন বাড়ছে, তেমনই পাশাপাশি বাড়ছে সুস্থতার হার। এই দুই বাড়ন্ত গ্রাফে লকডাউনেও বাঙালির মনে বেজে উঠেছে পুজোর বাদ্যি। কিন্তু সকলের প্রশ্ন একটাই, মুখ ঢাকা পরবে যখন মাস্কে তখন আর কী বা পুজো? কোথায় বা সাজ?
কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে আরও একটা কথা, ঠোঁটে রং না লাগলে পুজোই তো ফ্যাকাশে। অতিমারি তো ঠোঁটের ভাষাকে বন্দি করেছে মাস্কে।
এ দেশে ডিজাইনার মাস্ক প্রথম তৈরি করেন ফ্যাশন ডিজাইনার অভিষেক দত্ত। তিনি বললেন, “পুজোর জন্য লাল-সাদা কম্বিনেশনে মাস্ক তৈরি করছি আমি। ছেলেদের জন্য থাকছে লেদারের মাস্ক। পুজো মানেই শাড়ি, সেই কথা মাথায় রেখে ব্লাউজ, মাস্ক আর হাতের গ্লাভসকে এক ফেব্রিকে রাখা হচ্ছে।” প্রিন্টেড লিনেন আর কটনের থ্রি লেয়ার্ড মাস্ক এ বার পুজোর ফ্যাশনে বড় জায়গা করে নিচ্ছে। অভিষেক ‘কনভর্টেবল’ পোশাকের ওপর জোর দিচ্ছেন।
এ বার পুজোয় খুব বেশি কেনাকাটা করবেন না যাঁরা, তাঁদের কথা মাথায় রেখে অভিষেক বললেন, “কেউ একটা জ্যাকেট নিলেন। জ্যাকেটের কলারটা এমন করে তৈরি যাতে প্রয়োজনে সেটা মাস্ক হয়ে যাবে আবার কলার হিসেবেও থাকতে পারবে। শুধু একটা জ্যাকেট দিয়েই পুরনো পোশাকে পুজোয় নতুন চমক আনা যেতে পারে।”
পুরুলিয়ার চড়িদা গ্রামে ছৌ-এর আদলে বিভিন্ন ধরনের মুখোশ তৈরি হচ্ছে। তাঁর জন্য আপনাকে সুদূর পুরুলিয়ায় যেতে হবে না, আসানসোলের ‘তরী’ এই মাস্ক বিক্রি করার ব্যবস্থা করেছে অনলাইনে।
শাড়ির ক্ষেত্রেও ম্যাচিং ফ্যাব্রিকের থ্রি লেয়ার্ড মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে। মাস্ককে কোনও কোনও ক্ষেত্রে অ্যাক্সেসরিজ ভেবে ব্যবহার করার অভিনব রাস্তা তৈরি করেছেন অভিষেক। মাস্ক-কে একটা ছোট্ট ব্যাগের আকার দিয়ে কখনও তা মাস্ক কখনও ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দিলেন অভিষেক।
মাস্ক নিয়ে সারা বিশ্বে চলছে নানা পরীক্ষা। আমেরিকার বস্টন ম্যাগাজিন প্রকাশ করেছে কিছু মাস্কের ছবি। এগুলো একটি প্রতিযোগিতার জন্য কিছু স্থানীয় ডিজাইনারদের নকশা করা। এগুলোর কোনওটাই উঠে এসেছে সুতোর কাজ, কোথাও আবার মুখ সেজেছে অ্যাপ্লিকের ছোঁয়ায়। বাজারে পুজোয় মিক্সড অ্যান্ড ম্যাচ মাস্কের চাহিদা রয়েছে। কলমকারি, আজরাখ প্রিন্টের কাপড় মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করা হচ্ছে। মাঝে কলমকারি, দু’পাশে আজরাখ প্রিন্টের কাপড় জোড়া হচ্ছে।
বাটিক প্রিন্টের রংবেরঙের মাস্কের দাম ৭০ টাকা, খাদি কাপড়ের উপর ব্লক প্রিন্টের মাস্ক ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দু’দিক ব্যবহার করা যায় এরকম মাস্কও এসেছে। এই ধরনের মাস্কের দাম ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা। এছাড়াও ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সুতি কাপড়ের উপর কাঁথা স্টিচ করা মাস্ক। খাদি বা সুতির এক রঙা কাপড়ে রঙিন সুতো দিয়ে নজরকাড়া নকশা তোলা হচ্ছে। ছেলেদের ফ্যাশনে একরঙা, চেক প্যাটার্নের মাস্ক গুরুত্ব পাচ্ছে। ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান লা সুপার্ব, জীবজন্তু ও ফুলের নকশা তুলে এনেছে মাস্কে।
নিউ ইয়র্কের ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘কোলিনা স্রাদা’ লম্বা ফিতেওয়ালা মাস্ক নিয়ে এসেছে বাজারে। এগুলো টেনে ইচ্ছে মতো বেঁধে নেওয়া যায় মাথা বা কানের পিছনে। সঙ্গে আর কোনও গয়নার প্রয়োজন থাকবে না। মাস্কের চমকেই পুজো আড্ডা রঙিন হয়ে উঠবে। বাড়িতে সিল্কের স্কার্ফ থাকলে তিন কোনা করে ঘাড়ে বেঁধে মুখ থেকে গলা অবধি ঢেকে রাখতে পারেন।
ফ্যাশন ডিজাইনার অনুপম চট্টোপাধ্যায় বললেন, ” মাস্ক এ বার পুজোর প্রধান অ্যাক্সেসরিজ। আমাদের দেশে আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে কটন থ্রি লেয়ার মাস্ক পরা সবচেয়ে ভাল। তবে প্রিন্টেড মাস্ক হলে সলিড কালারের পোশাক পরুন। আর এক রঙা মাস্ক পরলে প্রিন্টেড হালকা পোশাক বাছুন। সিক্যুয়েল বা জারদৌসির মাস্ক বেরলেও পুজোর সময় গরমে সেটা না পরাই ভাল।”
লুই ভিঁত, ডিওর, জিভেঞ্চি অ্যান্ড ফেন্ডি, হার্মেস, শ্যানেল-সবাই নেমে পড়েছে মাস্কে মুখ ঢাকাতে। ইজরায়েলি সংস্থার ৩,৬০০ হিরে বসানো ১১ কোটি টাকার বিশ্বের মহার্ঘ মাস্ক না হয় বাড়াবাড়ি। কিন্তু সরোভস্কি ক্রিস্টাল খচিত মাইকেল নো’র ডিজাইনার মাস্কেও আপনার ফ্যাশন স্টেটমেন্ট দৌড়বে। দাম মাত্র শ’পাঁচেক ডলার! ফ্যাশনকে যাঁরা নিজের স্ট্যাটাস বোঝাতে ব্যবহার করেন তাঁদের জন্য এই ব্র্যান্ডেড মাস্কের জুড়ি মেলা ভার।