নেই পুজোর আমেজ, ছন্দহারা তিলোত্তমা
শরৎ ফুল ফর্মে। কিন্তু শহরের রাস্তা ‘মিস’ করছে পুজোর আমেজ। রাস্তার দু’ধারে পোঁতা হয়েছে বাঁশ। তবে এখনও তাতে পড়েনি বিভিন্ন পুজো কমিটির ব্যানার, পোস্টার। থিমের প্রচারে দর্শক টানার উদ্দীপনাও উধাও। নেই বিজ্ঞাপনের হোর্ডিংও। পুজোর সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই ঝলমল করে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ। রাস্তার দু’ধারে উঁচু বাড়ি থেকে নেমে আসে টুনি বাল্বের সারি। তৈরি হয়ে যায় দর্শক আনাগোনার জন্য বাঁশের তৈরি অস্থায়ী পৃথক রাস্তা। তবে এ বছর যেন সবই ছন্নছাড়া। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবকে ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকলেও পুজোর আমেজ এখনও খুঁজে পায়নি তিলোত্তমা।
শহরের বিভিন্ন পুজো কমিটি উদ্যোক্তাদের সাথে কথা বলে জানা গিয়েছে, চলতি বছরের পুজোর বাজেট কাটছাঁট করা অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সে ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল মিডিয়ায় পুজোর প্রচার করায় খরচ কম। একইসঙ্গে, অনলাইন মাধ্যমে খুব কম সময়ের মধ্যে সহজে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়। তাই পোস্টার ছাপার খরচ কমিয়ে সোশ্যাল সাইটে ছবি, ভিডিও পোস্ট করেই মণ্ডপে দর্শক টানার পরিকল্পনা নিয়েছে শহরের নানা পুজো কমিটির সদস্যরা। উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেন দুর্গাপূজা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোমেন দত্ত বলেন, ‘এ বছর বিভিন্ন কর্পোরেট সেক্টর থেকে বিজ্ঞাপনের সহযোগিতা অনেক কম। সাধারণভাবে চলতি পরিস্থিতির নিরিখে ব্যবসা এবং অর্থনীতি একেবারে তলানিতে। তাই পুজো কমিটিগুলি বিজ্ঞাপন সংস্থার সাহায্য পায়নি বললেই চলে।’
‘নিউ নর্মালে’ বেশকিছু পুজো কমিটি তাদের ফেসবুক, ইউটিউব প্রভৃতি সোশ্যাল সাইট থেকে পুজো সম্প্রচার করার ভাবনাচিন্তা ইতিমধ্যেই শুরু করেছে। সেই অনুযায়ী প্রচারও শুরু হয়েছে। তাই খরচ করে পোস্টার দিয়ে বাজেটের বোঝা ঘাড়ে চাপাতে চাইছেন না উদ্যোক্তারা। কলেজ স্ট্রিট সংলগ্ন চত্বর প্রতিবছর পুজোর প্রায় সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই সম্পূর্ণ মুড়ে যায় ব্যানার, পোস্টারে। তবে হাতে গোনা কয়েক দিন বাকি থাকলেও পোস্টার পড়েনি সেখানে। কলেজ স্কোয়ারের সামনের রাস্তার দু’ধারে প্রচুর পরিমাণে বাঁশ লাগানো হলেও রীতিমতো খাঁ খাঁ করছে সেগুলি। উত্তর কলকাতায় বসবাসকারী ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ সুধীরচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বলেই ফেললেন, ‘পুজো বলে তো মনেই হচ্ছে না, মশাই। হোর্ডিংয়ের জায়গায় শুধুই তো বাঁশের কাঠামো।’ একই অবস্থা দক্ষিণ কলকাতার দুর্গাপুর ব্রিজ সংলগ্ন নিউ আলিপুর চত্বরেও। অন্যান্য বছরগুলিতে উড়ালপুল জুড়ে পড়তে শুরু করে বিজ্ঞাপনের ব্যানার। থাকে নামীদামি কোম্পানির বিভিন্ন দ্রব্যাদির প্রচার। তবে এ বার যেন এক ভিন্ন দুর্গাপুর ব্রিজের ছবি। সেই আমেজই উধাও।