রাজ্যের তাঁতশিল্পীদের কাছ থেকে ৮ কোটি টাকার শাড়ি কিনল তন্তুজ
পুজো মানেই নতুন শাড়ি। তা যদি রেশমের সুক্ষ্ম সুতোর বিষ্ণুপুরের বালুচরী হয়, তাহলে তো কথাই নেই। সস্তার ফ্যান্সি শাড়ি যতই থাকুক। ফুলিয়া, ধনেখালি, বেগমপুর কিংবা সমুদ্রগড়ের তাঁতের শাড়ির কদর এখনও তুঙ্গে। কিন্তু, লকডাউন ও করোনা পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পড়েছিল বাংলার তাঁতশিল্পীদের। কারণ, পুজোকে কেন্দ্র করেই তাঁদের সারাবছরের ব্যবসা। কিন্তু, এবার ক্রেতার অভাব। বিদেশে রপ্তানিও বন্ধ।
ভিন রাজ্যেও চাহিদা কম। এই অবস্থায় শিল্পীদের পাশে দাঁড়াতে মানবিক উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনাকালে রাজ্যের তাঁতশিল্পীদের কাছ থেকে প্রায় আট কোটি টাকার শাড়ি কিনল তন্তুজ। যা গতবারের চেয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা বেশি। ফলে, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের মুখে হাসি ফুটেছে বাংলার তাঁতশিল্পীদের।
পুজোর ছয়-সাতমাস আগে থেকেই পুরোদমে শাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। শিল্পী পাড়ায় সারাদিন খট খটাখট আওয়াজ শোনা যায়। পুজোর আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, এই আশায় শিল্পীরা কাজ করে গিয়েছেন। কিন্তু, হাজার হাজার টাকার শাড়ি তৈরি হলেও ক্রেতার অভাবে বিক্রি করার সুযোগ পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রতি বছর পুজোর আগে জেলায় জেলায় সরকারি ক্যাম্প করে তন্তুজ। সেখানে শিল্পীদের কাছ থেকে সরাসরি শাড়ি কেনা হয়। যাতে তাঁদের লাভের পরিমাণ বাড়ে। এছাড়াও সমবায় সমিতির মাধ্যমে শাড়ি কেনা হয়। এবারও করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও সরকারি উদ্যোগে দু’ভাবেই শাড়ি কেনা হয়েছে।
দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর রাজ্যের তাঁতশিল্পীদের কাছ থেকে মোট ছ’কোটি ২৫ লক্ষ টাকার শাড়ি কিনেছিল তন্তুজ। এর মধ্যে জেলায় জেলায় ক্যাম্প করে ৭৫ লক্ষ টাকার শাড়ি কেনা হয়েছিল। এবং সমবায় সমিতির মাধ্যমে কেনা হয়েছিল সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার। সেখানে এবার মোট সাত কোটি ৬৯ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭০০ টাকার শাড়ি কেনা হয়েছে। অর্থাৎ প্রায় আট কোটি টাকার শাড়ি। এর মধ্যে সমবায় সমিতির মাধ্যমে ছ’কোটি ৭২ লক্ষ ৭১ হাজার ৭০৮ টাকার শাড়ি কেনা হয়েছে। জেলায় জেলায় ক্যাম্প করে এবার ৯৬ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকার শাড়ি কেনা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাম্প করে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে ৩৫ লক্ষ ৫৬ হাজার, পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রীগ্রামে থেকে ৩২ লক্ষ ৬০ হাজার, নদীয়ার ফুলিয়া-শান্তিপুর থেকে ২৫ লক্ষ ৬৭ হাজার, হুগলির খনেখালি ও বেগমপুর থেকে এক লক্ষ ৭৯ হাজার এবং হাওড়া থেকে এক লক্ষ এক হাজার টাকার শাড়ি শিল্পীদের কাছ থেকে সরাসরি কেনা হয়েছে।
তন্তুজের চেয়ারম্যান তথা বস্ত্রদপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে তন্তুজ লাভের মুখে দেখেছে। তাঁর নির্দেশেই সপ্তদশ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর হারিয়ে যাওয়া বাংলার বালুচরি শাড়ির ন’টি ডিজাইনও পুনরুদ্ধার করেছে তন্তুজ। করোনা পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক উদ্যোগে এবছর বাংলার তাঁতশিল্পীদের কাছ থেকে প্রায় আট কোটি টাকার শাড়ি কেনা হয়েছে। যা গতবারের অনেক চেয়ে বেশি। এবার ক্যাম্প করেই এক কোটি টাকার শাড়ি কেনা হয়েছে। এতে বাংলার হাজার হাজার তাঁতশিল্পী উপকৃত হয়েছেন।