নেই বুকিং, করোনা আবহে চরম দুশ্চিন্তায় ঢাকিরা
হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকদিনের অপেক্ষা। আর তার পরই শুরু হবে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দূর্গাপুজো। এদিকে অতিমারী পরিস্থিতির মধ্যেও রাজ্য সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর ইতিমধ্যে পাড়ায় পাড়ায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু এখনও কেমন যেন প্রস্তুত নয় জেলার ঢাকিরা। কলকাতার বেশিরভাগ পুজোতে জেলা থেকে ঢাকিরা যান ঢাক বাজাতে। কিন্তু সেই ঢাকিরা এবার শহর কলকাতাতে যাবেন কীভাবে? দীর্ঘ করেনা আবহে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে বন্ধ রয়েছে সমস্ত লোকাল ট্রেন পরিষেবা। আর সেই লোকাল ট্রেনই হল ঢাকিদের কলকাতা পাড়ি দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম।
বাঙালির দুর্গাপুজোর অন্যতম অঙ্গ হল ঢাক। ষষ্ঠীর বোধন থেকে বিজয়ার সিঁদুর খেলা। পুজোর প্রতিটি মুহূর্তে ঢাক যেন এক অন্যতম অঙ্গ। আর সেই ঢাকিরা আজ কেমন যেন গুমরে কাঁদছে। পুজোর সময় ঢাক বাজিয়ে যা টাকা উপার্জন হতো তা দিয়েই বছরের অনেকটা সময়ের খোরাক যোগাতেন ঢাকিরা। পুজোর ইনকাম ছাড়াও বছরের অন্যান্য দিন চাষবাস, হাতের কাজ করেই তাদের সংসার চলে। মহালয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যেত কলকাতা পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি। ঢাকিদের কাছেও দুর্গাপুজো শ্রেষ্ঠ উৎসব হলেও এই কয়েকটা দিন পরিবারকে ছেড়ে কাটাতে হতো তাঁদের। পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই ঢাকিদের বুকিং হয়ে যেত। যাদের আবার বুকিং হত না তারা পুজোর আগে কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে গিয়ে জমায়েত করতেন। আর সেখান থেকেই পুজো উদ্যোক্তারা বুকিং করে তাদের নিয়ে যেতেন মণ্ডপে।
একদিকে অন্যান্য বছরের মতো তেমন বুকিং নেই ঢাকিদের কাছে। হাতেগোনা কয়েকজন ঢাকিদের কাছে কলকাতা থেকে বুকিং এলেও কীভাবে যাবেন তা নিয়ে রয়েছে চিন্তা। লোকাল ট্রেন তথা বাঙালির লাইফ লাইন এখনও পর্যন্ত রাজ্যে বন্ধ। এছাড়াও বাস আগের মতো এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণে রাস্তায় নেই। তাও যে পরিমাণ বাস চলছে তাতে সেখানে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার।
মছলন্দপুরের বাসিন্দা ঢাকি সম্রাট গোকুল চন্দ্র দাস এই বিষয়ে বলেন, “আমরা গত সাত মাস ধরে বসেই আছি। মার্চ এপ্রিলে যা প্রোগ্রাম ছিল, সমস্তটাই ক্যান্সেল হয়ে গেছে কোভিডের জন্য। গত বছরেও আমরা নাহোক ৩০ থেকে ৩৫টা প্রোগ্রাম আমরা করেছি বিভিন্ন জায়গায়। দিল্লিতে ছিল, বোম্বেতে ছিল, ব্যাঙ্গালোরে ছিল, অসমে ছিল, আগরতলায় ছিল, কলকাতায় তো ছিলই। এবছরে মাত্র দুদিনের একটা প্রোগ্রাম আছে অষ্টমী নবমীতে বাগবাজারে যেখানে আটজন মহিলা বাজাবে। এছাড়া নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘে ছজন মহিলা ও চারজন পুরুষ পুরো পুজোতে বাজাবে। এছাড়া বাকি কমিটি বলছে আপনারা বাজালে প্রচুর মানুষ জড় হয়ে যাবে, এদিকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ আছে জমায়েত করা যাবে না, সেক্ষেত্রে কিকরে আপনাদের সঙ্গে কনট্র্যাক্ট করি? গত বছরের তুলনায় এবার জিরোই বলতে পারেন। কোথায় ৩৫টা প্রোগ্রাম আর কোথায় দুটো প্রোগ্রাম? সাত মাস ধরে বসে প্রচুর টাকার দেনা হয়ে গেছে। আমি নিজে আমার সহঢাকিদের সাহায্য করেছি এবং অনেক শিল্পী আমাদের হেল্প করেছেন।”