পুজোয় মন খারাপ সল্টলেকের
কোভিড আবহে উমার আবাহন করতে গিয়ে কৌলিন্য হারিয়ে ফেলছে সল্টলেক। পুজোর ক’টা দিন মানেই পড়শিদের মিলন মেলা। ব্লকে ব্লকে পাতপেড়ে খাওয়া। বড়দের নাটক, গান-বাজনা। কচিকাঁচাদের বিস্কুট দৌড়, অঙ্ক দৌড়, আরও কতকিছু। কোভিডের মোকাবিলায় এবার সবই জলাঞ্জলি!
সবক’টি ব্লক কমিটিকেই আপস করতে হচ্ছে ঐতিহ্যের সঙ্গে। অক্ষরে অক্ষরে মানতে হচ্ছে সরকারি নির্দেশিকা। কাজেই বাতিল সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছোঁয়াচ এড়াতে বন্ধ থাকছে বসিয়ে ভোগ খাওয়ানোর সেই চল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মুষড়ে পড়েছেন উপনগরীর নাগরিকরা।
সল্টলেকে থিমের লড়াই, মন্ডপ কিংবা প্রতিমায় বৈচিত্র্যের ঝোঁক হালের। বিশ-বিষের গোরোয় সে সব এখন বিশবাঁও জলে। নমো নমো করে আপাতত উতরে যাক দু’হাজর বিশ সালটা। একুশে না হয় ফেরানো হবে হারানো জৌলুসকে। তবে, কোভিড বিধি আর সাধ্যের সামঞ্জস্য রেখে কিছু ব্লক কমিটি পুজোর অভিনবত্ব আনার চেষ্টা করছেন। থাকছে ‘ভার্চুয়াল কালচারাল প্রোগ্রাম’।
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নির্ধারিত স্লট বুকিং করে অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থাও করছে কোনও কোনও ব্লক কমিটি। আবার কোথাও বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্যাকিং করে ভোগ পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই ভোগ হবে একেবারে স্বাস্থ্যসম্মত। এবং সেটা সুনিশ্চিত করতে প্যাকিং প্রক্রিয়া দেখানো হবে ফেসবুক লাইভে। পুজো-প্রযুক্তির এই মেলবন্ধনের মধ্যে প্রাণ খুঁজে পাচ্ছেন না সল্টলেকবাসী।
এএ ব্লকের পুজো মণ্ডপের চারটি স্থানে বসছে স্যানিটাইজার স্ট্যান্ড। প্রসাদে কাটা ফল বলে কিছু থাকছে না। দেওয়া হবে গোটা ফল। পুরো ব্লক ঘিরে থাকবে ২০ টি মাইক। বাসিন্দারা বাড়িতে বসেই পুজো এবং অঞ্জলির মন্ত্র শুনতে পাবেন। তবে, অষ্টমীর অঞ্জলির জন্য বিশেষ একটি মোবাইল অ্যাপের ব্যবস্থা করেছেন ব্লকের পুজোকর্তারা। তার মাধ্যমে অঞ্জলি দিতে চাইলে আগাম ‘টাইম স্লট’ বুকিং করতে হবে বাসিন্দাদের।
গত বছরের তুলনায় পুজো বাজেট ৬০ শতাংশ কমিয়ে পুজোর আয়োজন করছে এজে ব্লক। তার মধ্যেই থাকছে উৎসব-বিনোদনের পুরোদস্তুর বন্দোবস্ত। সেক্ষেত্রে অবশ্যই জোর দেওয়া হচ্ছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। উদ্যোক্তা মৈনাক দত্তের কথায়,‘অনলাইনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। মণ্ডপের সামনে বসানো হবে দুটি এলইডি স্ক্রিন।
এছাড়াও ব্লক কমিটির ফেসবুক এবং ইউটিউবের পেজ থেকে রেকর্ডিং সম্প্রচার করা হবে। রেকর্ডিং করা হবে বাড়ির ভিতর। কোভিডবিধি মেনে পুজো হচ্ছে করুণাময়ী লাগোয়া বিকে-সিকে ব্লকেও। বিজে ব্লকে এবারের থিম রাজবাড়ি। তবে, ভোগ বিতরণ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কোনওরকম ঝুঁকি নিচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। সবার একটাই কথা—‘ওসব তোলা থাকা একুশের জন্য।’